বাঙলাদেশের ১৬৬ টি চা বাগানে ৬ লক্ষ চা শ্রমিকের বসবাস। এদের মধ্যে বাগানে কাজ করে ১ লক্ষ ২০ হাজার শ্রমিক, বাকিরা তাদের আত্মীয় স্বজন। আজ হতে দেড় শতাধিক বছর আগে বাঙলাদেশে যখন চা চাষ শুরু হয়, তখন অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা হতে চা শ্রমিকদের মোটা মজুরি ও উন্নত জীবনধারণের লোভ দেখিয়ে এদেশে দাসবৃত্তির জন্য আনা হয়। যেহেতু অবিভক্ত ভারত ছিল, সেহেতু নাগরিকত্বের প্রশ্ন ছিলনা। নাগরিকত্বের প্রশ্ন উঠে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং পর্যায়ক্রমে বাঙলাদেশ সৃষ্টি হলে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদান করে। তবে নাগরিকত্ব প্রদান করলেও চা শ্রমিকদের নাগরিক সুবিধা কখনোই দেয়া হয়নি, দেয়া হয়নি তাদের ভূমির অধিকার। আজো ৫৫ টাকা হতে ৮৫ টাকায় উন্নীত হওয়া তলবে আর কেজি দুয়েক মোটা লাল চাল/আটা দিয়ে তাদের পরিবার চালাতে হয়। নেই স্যানিটেশন সুবিধা, সব রোগের একই ওষুধ প্যারাসিটামল ছাড়া নেই কোন স্বাস্থ্য সুবিধা, শিক্ষার অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। ১৬৬ টি চা বাগানে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৬ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়/কলেজ???
উপরোক্ত তথ্যগুলো চা শ্রমিকদের জীবনের একটা খন্ড চিত্র মাত্র। বাস্তব পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। নিজদেশেই যেখানে চা শ্রমিকরা পরবাসী/নাগরিক সুবিধা বিহীন, সেখানে মিয়ানমার কেন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়নি/দিতে চায়না এই প্রশ্ন করাই মূর্খতা। মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার অধিকার/মানবাধিকার আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। তাদের অধিকারের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে, করুন! আমরাও করছি। তবে দয়া করে, রোহিঙ্গা ইস্যু স্থিমিত হয়ে গেলে দেশের ভেতরেই নির্যাতিত সংখ্যালঘু/আদিবাসী/চা শ্রমিকদের পক্ষেও প্রতিবাদ করুন। নইলে বলতে হবে, আপনি মূর্খ তো অবশ্যই সাথে অন্ধ ও বটে।
EmoticonEmoticon