নারীবাদের সাথে পুরুষবিদ্বেষ গুলিয়ে যাচ্ছে। যদিও নারীবাদ শব্দটা খুব ছোট একটা শব্দ মনে হয় আমার কাছে, মানবতাবাদের খুব ছোট্ট একটা অংশ হতে পারে নারীবাদ, এর বেশী কিছু নয়। বোধহয় যারা এটাকেই একমাত্র 'বাদ' হিসেবে ধরে নিয়েছেন তাদের জন্য এই গণ্ডি থেকে বেড়িয়ে আসা মুশকিল।
যে কারণে কথাগুলো বলছিলাম তা হল, ইদানিং রাস্তায় কিংবা যানবাহনে অনিচ্ছাকৃত কোনও নারীর গায়ে হাতের কিংবা গায়ের ছোঁয়া লাগলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন কিছু নারী। ঐ মুহূর্তে তাদের এটিটিউড দেখলে মনে হয় তারা যেন একজন ইভটিজারকে বা ধর্ষককে ধরে ফেলেছে!!! আমি এটাকে এই অতিনারীবাদের কুফল মনে করি, পুরুষবিদ্বেষ।
আপনি যদি নারী পুরুষ সমান অধিকার কিংবা সমতা চান তাহলে আপনাকে এটাও মানতে হবে যে পুরুষ হলেই সে নারীকে ভোগ্যপণ্য মনে করেনা। কিংবা সবসময়ই সবাই ইচ্ছাকৃত কারও গায়ে হাত নাও দিতে পারে। কেনোনা এই ব্যস্ত শহরে যেখানে প্রতি মুহূর্তে নিরাপদে চলাচল করাই দায়, সেখানে ভিড়ের মধ্যে নিজের মানিব্যাগ-মোবাইল না সামলে আপনাকেই সবাই ভোগ করার আশায় বসে নেই। আমি অবশ্য ঢাকার বাইরের ছোট শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলের কথা বলছিনা। তাছাড়া এখনও পুরুষ ছাড়াও কিছু 'মানুষ' আছে সমাজে এবং দিনে দিনে তাদের সংখ্যা বাড়ছে, এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। যাদের কারণে আপনি এখনও নিরাপদে বাস করতে পারছেন সমাজে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে তাদের অবদান আপনি ঠিকই ভোগ করে চলেছেন।
যদি মাথায় প্রশ্ন আসে কিভাবে বুঝব কেউ ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত কিছু করছে, তাহলে বলব যদিনা আপনি নিশ্চিত হন কারও উদ্দেশ্য সম্পর্কে।
আপনি একই সাথে 'নারী পুরুষ সমতা' আর 'অনিচ্ছাকৃত গায়ে ছোঁয়া লাগলেই ইজ্জত শ্যাষ' কিংবা 'মহিলা সিট ছাড়েন' (যেটা কিনা নারীকে দুর্বল হিসেবে একটু নিশ্চয়তা দেবার জন্যই) টাইপের মানসিকতা নিয়ে চলতে পারেন না। যদি চলেন তাহলে আমার কাছে কিংবা অনেকের কাছেই আপনি নারী হয়েই থাকবেন চিরজীবন, মানুষ হয়ে নয়।
নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক, এটা কেউ স্বীকার করুক আর না করুক। কেউ কারও চাইতে কম নয়, বেশী নয়। সাময়িকভাবে কিংবা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে তা মনে হলেও নারী পুরুষ সমান এবং দুয়ে মিলেই মানব সভ্যতা। কোনও একজনের অবমাননায় সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা আর কোনও একজনের অবর্তমানে মানব সভ্যতা বিলুপ্ত হবে।
EmoticonEmoticon