রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা উচ্ছেদের কারণ বুঝতে এই লেখাটি সহায়ক হবে ।

দেশে দেশে আগ্রাসনের স্বীকার ছোট ছোট জাতি এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়। কথিত কর্পোরেট উন্নয়নের ন্যাক্কারজনক আগ্রাসনের কবলে পড়ে স্বীয় অস্তিত্ব হারিয়ে বসেছে অনেক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। সম্প্রতি এই হিংস্র আগ্রাসনের মাঝে পড়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।  ৯০ এর দশক থেকে সেখানে কর্পোরেট পুঁজির বিনিয়োগ শুরু হয়। যা আজকের দিনে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি দুই বড় জনংখ্যার দেশ চীন এবং ভারতের পুঁজি বিনিয়োগের জন্য জমি দরকার। আর তা করতে গিয়ে মিয়ানমার আর্মি এবং ফ্যাসিবাদী সুচি সরকার যে কোন উপায়ে বিতারিত করতে পারলে কাজ হয়ে যায়। ফলে সেখানে দেখা দিয়েছে জমি সহ প্রাকৃতিক সম্পদের। আর এভাবেই রাষ্ট্রের রাক্ষুস বাহিনী এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে বিতারিত করে জমি দখল করে কর্পোরেটের হাতে দিতে চায়। এখান থেকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন লোকদের ভাল কমিশনের সুযোগ আছে। মিয়ানমার আজ ভৌগলিক কারণে চীন এবং ভারতের পুঁজির অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে। যেখানে উন্নয়নের জন্য দরকার জমি। আর এই জমি থেকে বসবাসরত লোকজনকে বিতারিত করতে হবে। এভাবে ধর্মের আড়ালে আগ্রাসনবাদী পুঁজির আগ্রাসনের কবলে পড়েছে এই নিপীড়িত সম্প্রদায়।

আমাদের দেশে যদি সাম্প্রতিক উন্নয়নের মডেল খেয়াল করেন দেখবেন একই ধরণের উচ্ছেদ চলছে। যেমন শুরু হয়েছিল মুন্সীগঞ্জ এর আড়িয়াল খাঁ বিলে বিমানবন্দরের নামে জমি দখলের পায়তারা দিয়ে। এরপর চা শ্রমিকের জমি দখলের চেষ্টা। তারপর বাঁশখালীর জমি দখল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনগণের উপর নির্যাতন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে পর্যটন কেন্দ্র সহ নানা ধরণের উচ্ছদের অভিযান। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জমি ফেরত না দিয়ে উন্নয়নের নামে জমি দখল করা এবং নিজেদের জমির অধিকার দাবী করলে হত্যা, নির্যাতন করে ঘরে অগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর সাথে সুন্দরবন বিনাশী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ যা কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে হচ্ছে। এখানকার স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনে এই উন্নয়ন মডেল নয়, মডেল হচ্ছে লুটেরাগোষ্ঠীর প্রয়োজনে। আর রাষ্ট্র হয়ে উঠছে জনগণের জন্য এক হিংস্র দানব যে শুধু নির্যাতন করতে জানে।

এই যে উচ্ছেদের কৌশল ভিন্ন থাকলেও উদ্দেশ্য এক। সবই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন নীতির ফল। এজন্য যা প্রয়োজন সকল নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, যেখানে একটি গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ব্যবস্থার জন্য লড়াই চালিয়ে যেথে হবে। দেশে দেশে নির্যাতিত শোষীত মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি সম্পর্ক গড়ে তুলা গুরুত্বপূর্ণ।  এভাবেই আমাদের ঘাড়ে যে দানব বসে আছে তাকে সমূলে উচ্ছেদ করতে না পারলে সমূহ বিপদ হয়ে হাজির হবে।


EmoticonEmoticon