মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জ্ঞান ও সত্যবোধের ধারণা

যে জ্ঞান সামাজিক অন্যায় ও নিপীড়নের বিরোদ্ধে দাঁড়ায় না, সেই জ্ঞান খণ্ডিত, সত্যবিরোধী স্থুল এবং অন্যায়ের সমর্থনকারী। ন্যায় অন্যায় কোন শ্বাসত বিষয় নয় স্থান এবং কালের বিচারে ন্যায় অন্যায় বিকশিত হয়। এটা সত্য যে অন্যায় জুলুমের বিরোদ্ধে না দাঁড়িয়ে সে সব অন্যায়কে নানাভাবে প্রশ্রয় দেয় সে সত্যবিরোধী। জ্ঞান হল এই মহাবিশ্বের যে বিকাশ হয়েছে তার বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে যেমন পরিচিত হওয়া তার সাথে মানব সভ্যতার বিকাশের ধারায় তার যে অর্জন ইতিহাসে লড়াই সংগ্রামের জন্ম দিয়েছে এর সাথে পরিচিত হওয়া। কিন্তু নীতি বা সত্যবোধ হল সেই ইতিহাসের পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো, সমাজ বিকাশের চাকাকে এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু পুস্তকলব্ধ অনেক বড় জ্ঞানী এই সত্য উপলব্ধি করেন না। ফলে তিনি সত্যবিরোধী।

একটি নিপীড়িত শ্রেণী যখন যখন আগ্রাসনের স্বীকার, গণহত্যার স্বীকার তখন তাঁদের ভুল ত্রুটি ছোট ছোট অপরাধকে খুটিয়ে খুটিয়ে উপস্থাপন করা, এটাকে প্রধান করে দেখা অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান করা হয়ে যায়। মানুষের ভুল ত্রুটি অপরাধ সামাজিক বাস্তবতার সাপেক্ষে। ফলে যখন কোন জাতি রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের স্বীকার হয় বা অন্যদেশ, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের স্বীকার হয় তখন এই নিপীড়িত জাতির ভুলগুলো উপস্থাপন করা সত্যবিরোধী। বরং এটা বাস্তব যে তাঁদের এই অপরাধকে সময় সাপেক্ষে আলোচনা করা যায়। কিন্তু যখন একটি গণহত্যার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁরা তখন তাঁদের পুর্বের অপরাধকর্মকে প্রধান করে উপস্থাপন করার অর্থ হল লুটেরা শাসক নিপীড়কের পক্ষে দাঁড়ানো; শোষীত নির্যাতিতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। আমরা যখন পাহাড়ি আদিবাসীদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরোদ্ধে দাঁড়াই তখন তাঁদের ছোট ছোট ভুল ত্রুটি উপস্থাপন করি না। এই করার অর্থ বড় অন্যায়কে সমর্থন করা। আবার যখন রোহিঙ্গাদের উপর একটি গণহত্যা, উচ্ছেদ চলছে সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ভুল ত্রুটি সীমাবদ্ধতা উপস্থাপন করার অর্থ গণহত্যা নিপীড়নকে জাস্টিফাই করা। এই কাজটি অনেকেই জেনে হোক না জেনে হোক করেছেন। ফলে অনেকেই না বুঝে প্রতিক্রিয়াশীল শিবিরে যোগ দিয়েছেন অবস্থান করেছেন।

আরেকদল খুব ক্ষেপেছেন রোহিঙ্গারা কেনো তাঁদের মত মধ্যবিত্ত ভদ্র লেবাসধারী পোশাক আশাক কথাবার্তায় হল না? কেন সব সময় গোরা ধার্মিকের মত আচরণ করে, অনেকে একটু আগ বাড়িয়ে জঙ্গিবাদী চিন্তাধারা লালন করে। কেউ কেউ আমাকেও রোহিঙ্গাদের পক্ষে লেখার জন্য জঙ্গিবাদের সমর্থক, পক্ষালম্বনকারী হিসেবে ও ট্যাগ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব সত্যবোধ থেকে সরে দাঁড়াইনি। কারণ মার্ক্সবাদ এমন এক বিষয় যা দুনিয়ার ন্যায় অন্যায়ের এক বস্তুবাদী ধারণা দেয়। ফলে মার্ক্সবাদের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে এই উপলব্ধির মধ্য দিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কম। তো রোহিঙ্গারা যুগের পর যুগ শিক্ষা স্বাস্থ্য সামাজিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত একটি জাতি। তাঁরা নানা ধরণের কুসংস্কার এবং গোরামির মধ্যেই বাস করে। একই উপাদান আমি বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখেছি। এখনো বিভিন্ন জায়গায় এই উপাদান খুঁজে পাওয়া যাবে। এটা তাঁদের দোষ নয়। বরং সামাজিক বিকাশে তাঁদের বঞ্চিত রেখে তাঁদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক সাহেবগণ যাদের মধ্যে লেখক সাহিত্যিক আছেন তাঁদের এই পিছিয়ে থাকাকে খুবই খারাপভাবে দেখছেন। একবার বিচার করলেন না কেন এরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে আছে। ফলে এই ধরণের মানুষ সত্যবিরোধী, অন্যায়ের পক্ষালম্বনকারী।

আপনি একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দানের বিরোধী হতে পারেন। সেই মত কে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু না যখন এর বিরোধী হতে গিয়ে সত্য মিথ্যা যুক্ত করে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করবেন তখন তা অন্যায় এবং নির্যাতনের পক্ষে যায়। এটার বিরোধী আমি। তখন এর বিপরীতে আমাকে কলম ধরতে হয়। আপনার এই ভণ্ডামি মুখোশ খুঁলে দিতে হয়। যদিও অনলাইনে এই বিষয়ে কম শক্তিশালী লেখা পেয়েছি। ফলে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারণা শক্তিশালী ছিল। আরেকদল সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিলেও এরা আবার এদেশের বৌদ্ধদের নির্মূল করতে চান। ফলে এরাও অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে আমার মার্ক্সবাদী বন্ধুদের একটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল যারা নানাভাবে এই অন্যায়ের বিরোদ্ধে লিখেছেন, নিউজ শেয়ার করেছেন। ফলে বাংলাদেশের শাসক প্রধানমন্ত্রী এখন রোহিঙ্গাদের প্রতি কিছুটা মানবিক হতে বাধ্য হয়েছেন। যাইহোক রোহিঙ্গারা তাদের ভূমিতে মর্যাদা নিয়ে আবার বেঁচে থাকার সুযোক পাক সেই প্রত্যাশা করি।


EmoticonEmoticon