বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধর্মের নামে যেখানেই উগ্রপন্থার বিস্তার হয়েছে সেখানে রাজনীতি যথেষ্ট দুর্নীতি পরায়ন ।

ভারতের কর্নাটকে গৌরী লঙ্কেশ নামের একজন সেক্যুলার সাংবাদিককে খুন করেছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকজন মুক্তবুদ্ধির মানুষকে খুন করা হয়েছে ভারতে। যার একটির ও বিচার হয়নি। মৌলবাদ সে যে ধর্মের নামে হোক ভয়ংকর! ইসলামের নামে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। যার প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন ব্লগার লেখক কে খুন করা হয়েছে। ভারতে রাজনীতির আড়ালে যে উগ্রপন্থার বিকাশ হয়েছে তার ভাবগত জমি তৈরি করেছে লুটেরা রাজনীতি। বিশাল জনসংখ্যার ভারতে যেমন সেক্যুলার মানুষের সংখ্যা অনেক। তার সাথে সাথে ধর্মীয় কুসংস্কার জাতপাত অন্ধ ধর্মীয় ভাবাবেগ এর মানুষের সংখ্যা বিশাল। মানুষের এই অন্ধত্বকে পুঁজি করে একদল লুটেরা সমাজে হানা দিয়ে চলে। তার মধ্য থেকে আরেকদল মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই চালান। গৌরী লঙ্কেশ ছিলেন ক্ষুদ্র এই সংখ্যার মানুষের মধ্যে একজন কলম যোদ্ধা। জীবন দিয়ে যাকে প্রমাণ করতে হয়েছে অন্যায় আর অন্ধ মৌলবাদের কাছে মাথা নোয়াতে না হয়।

ধর্মীয় উগ্রপন্থার দেশে দেশে যে জায়গায় মিল তা হল সে একদেশ থেকে অন্যদেশে ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও এদের আদর্শের মিল আছে। যেমন হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের বন্ধুত্ব উগ্র মৌলবাদী বৌদ্ধধর্মের মিয়ানমারের সাথে। ধর্মেই দোহাই দিয়ে এরা সবাই মানুষ খুনে লিপ্ত। আবার বাংলাদেশের উগ্রপন্থী মৌলবাদীদের সাথে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সখ্যতা আছে। ফলে ধর্মের নামে যেখানেই উগ্রপন্থার বিস্তার হয়েছে সেখানে রাজনীতি কিন্তু যথেষ্ট দুর্নীতি পরায়ন।

এবার দেখুন হিন্দুত্ববাদী বিজিপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে সুচি সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। একবার ও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার নিন্দা করেন নাই। বা মিয়ানমার সরকারকে হত্যা বন্ধের আহবান জানান নাই। কারণ সেখানে দুই মৌলবাদী শক্তির বন্ধুত্বের ফাটল ধরে যাবে। এর সাথে অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ আঞ্চলিক শক্তির সমাবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবার অন্যদিকে চরম জাতীয়তাবাদী শক্তি চীন মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক স্বার্থে মিয়ানমারের সব ধরণের অপকর্মের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আবার যারা মুসলমান মুসলমান বলে কান্দিয়া বুক ভাসাতেছে সেখানেও মুসলমান প্রধান দেশগুলো নিরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে। পাকিস্তান মিয়ানমারের সাথে অস্ত্র চুক্তি করেছে। সৌদি আরব নিজ প্রতিবেশী ইয়েমেনে গণহত্যা চালাচ্ছে। তুরষ্ক ছাড়া অন্যদেশের এই বিষয়ে ভূমিকা লক্ষ করা যায় না। তাহলে মুসলিম উম্মাহ মুসলিম উম্মাহ চিল্লাইয়া লাভ নাই। যেখানে অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি আছে সেখানে ধর্মের নামে ভ্রাতৃত্ব বেমানান। বরং সারা দুনিয়ার বিবেকমান মানুষ নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। এরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, অনেকেই সেক্যুলার নাস্তিক। কিন্তু মানবিক প্রশ্নে এরা রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের কিছু সুবিধাবাদী শ্রেণী নিজেদের সুবিদার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াতে ধর্ম দেশ জাতি বড় বিষয় নয়।

দেশে দেশে এইভাবে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায় সমাজ বিকাশের চাকাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ তাঁদের একজন। তাঁর প্রতি অসংখ্য শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর লড়াই এগিয়ে যাবে।


EmoticonEmoticon