রোহিঙ্গা আত্মপরিচয়-দানকারীদেরকে বাঙালী হিসেবে চিহ্নিত করে বার্মার সামরিক চক্র ও সরকার যে-নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তার দায়ভার সমগ্র বর্মী জনগণের ওপর চাপিয়ে যারা সমগ্র জাতির নামে বিভিন্ন বাজে বিশেষণ প্রয়োগ করে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন, আমি একজন বাঙালী হিসেবে তার প্রতিবাদ করি।
আমি এমনকি পাক-হানাদার বাহিনী ও সামরিক জান্তার পরিচালিত বাঙালী-গণহত্যার জন্যেও পাকিস্তানের কোনো বিশেষ জাতি কিংবা জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচারের পক্ষপাতী নই।
ভারতের পুঁজিপতি ও শাসক বাংলাদেশকে অধীনতামূলক মিত্রতার কৌশলে শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে, তার জন্যেও আমি ভারতীয় জনগণ কিংবা ভারতের কোনো জাতির প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো।
নির্বিচারে কোনো জাতির বিরুদ্ধের ঘৃণা প্রচার ও বিষোদগার করাই হচ্ছে, "জাতির নামে বজ্জাতি" করা। মানবিক ও আত্মমর্য্যাদাশীল বাঙালী অতি-অবশ্যই জাতির নামে বজ্জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। জাতির নামে বজ্জাতি হলেই, জাতির মধ্যে সবচেয়ে বজ্জাতেরা জাতির ভাগ্যবিধাতা হয়ে ওঠে শেষ পর্যন্ত জাতির জীবনীশক্তি নিঃশেষিত করে সমগ্র জাতিকে অমানবিক করে তোলে।
আমি বিশ্ব-বাঙালীর যে-মর্য্যাদার কথা বলি, সে-মর্য্যাদা অন্যজাতিকে 'অসভ্য', 'জংলী' কিংবা 'বর্বর' বলে প্রতিষ্ঠিত-তো হয়নি-ই; এতে বরং বাঙালী জাতির আত্মমর্য্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমি বাঙালীর জাতি-রাষ্ট্রকে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার কথা - বিশেষতঃ পারমাণবিক শক্তি ও এককোটি বঙ্গসেনার কথা - বলে আসছি দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু এই সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতি অন্য কোনো দেশ আক্রমণের জন্যে অর্জন করতে বলিনি। বলেছি, আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষার জন্যে।
আমি স্পষ্ট মনে করি, বাঙালীর কোনো অধিকার নেই নিজের বাংলাভূমি ছাড়া অন্য কোনো ভূমি দখলের। তা করার চেষ্টা করলে, তা হবে আগ্রাসন। আমি মোটেও আগ্রসী জাতির অংশ হতে চাই না। আমার বিশ্ব-বাঙালীত্ববোধ যে-কোনো জাতির বিরুদ্ধে যে-কোনো জাতির আগ্রসনের বিরুদ্ধে।
আমি মনে করি, রোহিঙ্গা আত্মপরিচয়দানকারী নিপীড়িত বাঙালীরা যেহেতু নিজেরদেরকে বাঙালী বলে মনে করেন না, আমি তাদের প্রকৃত পরিচয়টা কী, তা আজীবন বলতে থাকলেও, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে বাঙালী বানানোর পক্ষে নই। আমি তাদের বাঙালীত্বের সত্যতার কথা বলবো, কিন্তু সত্য চাপিয়ে দেবো না।
রোহিঙ্গা আত্মপরিচয়দানকারী যদি তাদের অস্তিত্বের জন্যে লড়াই করে, বাঙালীর উচিত হবে, তাদেরকে সাহায্য করা। কিন্তু বাঙালী যা উচিত হবে না কোনোক্রমেই, তা হলো বার্মা আক্রমণ। বার্মা যদি আক্রমণ করে, বাঙালীর অতি-আবশ্যিক কর্তব্য হচ্ছে সেই আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দেওয়া।
যারা বার্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী রেটরিক প্রচার করে এক ধরণের প্যান-ইসলামিক সেণ্টিমেণ্ট গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, তারা আসলে পাকিস্তানের সাথে জোট বাঁধতে চান। এদের মনে হয়তো তথাকথিত পাকিস্তান পুনরেকত্রিকরণের স্বপ্ন এখনও লালন করছে।
আমি জানি ইসলাবাদীরা যেমন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তেমনিভাবে হিন্দুত্ববাদীরাও ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভুত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমি এই দুই স্বপ্নকে দুঃস্বপন বলে প্রত্যাখ্যান করি।
আমি অভিন্ন বাঙালী আত্মপরিচয়ের সুসভ্য মানবিক জাতি এবং সমগ্র বাংলার জল-স্থল-অন্তরীক্ষ ধারণ ও সংরক্ষণ করে শক্তিশালী বাংলাদেশ চাই, যা হবে বিশ্বের সকল বাঙালীর প্রাকৃতিক আবাস ও নিরাপদ আশ্রয়-স্থান।
আমি চাই, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাজনজাতি হিসেবে বাঙালী জাতি তার বিশ্ব-ভূমিকা পালন করুক। আমি বিশ্বাস করি, বাঙালী একদিন তা করবেই।
২৭/০৯/২০১৭
লণ্ডন, যুক্তরাজ্য
EmoticonEmoticon