মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

"গল্প নয় সত্যি"- ০৪

ভারী শাড়ি,গহনা,মাল্টি রং এ মূর্তি সাজিয়ে আমাকে বসিয়ে রাখা হলো খাটের এক কোণে! 
ঘর ভর্তি আত্মীয়-স্বজন, সবাই রাতের খাবের শেষ করে যার যার শোবার ব্যাবস্থা চলছে৷
রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই,গ্রামে তখন গভীর রাত৷ গত কয়েকদিনে টেনশন, খাওয়াদাওয়ার অনিয়মে শরীর বেশ ক্লান্ত ছিলো৷ বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম, আর একটু পর পর নানু ধাক্কা দিচ্ছিলেন যেন ঘুমটা চোখ থেকে তাড়াই৷
১২ টার পর আমাকে দাদীর রুমে নিয়ে যাওয়া হলো ফুলশয্যার ব্যবস্থা সেখানেই করা হয়েছে, দাদীর ছোট্ট খাটে৷ মাল্টি রংয়ের জরি দিয়ে পুরো খাট টা চাচাতো বোনেরা সাজিয়েছে৷
নানু আমাকে খাটের এক স্থান আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বল্লেন ওখানে উঠে বস৷ ভদ্রলোক খাটের আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে ছিলেন, আমাদের দেখে তার পা-দুটো গুছিয়ে নিয়ে খাটে উঠার জন্য জায়গা করে দিলেন৷
আমি যথা স্থানে বসলাম, আমার পাশে নানু ও বসলেন৷ মুঠোহাত ঘোমটা দিয়ে আমাকে বসিয়ে রাখা হলো, বেশ কিছুক্ষন নিরবতার পর ভদ্রলোক মুখ খুল্লেন, নানুকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন নানী কি নাতনীরে পাহারা দিবেননি ?
হেসে হেসে নানুও বল্লেন হ্যা দুই জনকেই পাহারা দিমু৷
তারা খোশ গপ্পো করেই চল্লেন, আমি আবার ঝিমুতে শুরু করলাম, যখনি ঝিমুনি দেই নানু আস্তে করে চিমটি কাটেন, কিছু মুহুর্তের জন্য ঘুম পালাতে গিয়ে আবার ফিরে আসে আবার চিমটি কাটে৷
নানুর আঁচলের একটা অংশ আমার হাতে প্যাচানো ছিলো, টান লাগতেই ঘুম পালালো নানু উঠার চেষ্টা করছেন আমি আবার টেনে ধরলাম৷ নানু বল্লেন আমি একটু টয়লেটে যাবো এখনি আসছি৷ ছেড়ে দিলাম, নানু বেড়িয়ে যেতেই ভদ্রলোক উঠে দরজা বন্ধ করে দিলেন৷
হঠাৎ মনে হলো পুরো শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে, এমনিতেই পৌষের শীত তখন৷
ভদ্রলোক আবার যথাস্থানে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে পরলেন, আবার বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ!  আমার ঝিমুনি অাবার শুরু হলো!  তা দেখেই সে প্রশ্ন করলেন তোমার কি ঘুম পাচ্ছে ?
কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম,পিঠের মধ্যে খুব ব্যথা হচ্ছিলো তবু ও নড়তে পারছিলাম না ৷ভদ্রলোক আবার বলতে শুরু করলেন তুমি কি জানো আজ রাতটা বিশেষ রাত?  এ রাত জীবনে একবারই আসে!
তখনো চুপচাপ বসে রইলাম!
তিনি আবার বল্লেন এই বিশেষ রাতে স্ত্রী কে কিছু দিতে হয় তুমি কি চাও বলো?
আমি চুপ!
কিছু একটা বলো, এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে তো ঘুমাতে পারবেনা সারারাত বসেই কাটাতে হবে, বলো কি চাও ?  যে কোন কিছু তুমি চাইতে পারো!
-মৃদু স্বরে বল্লাম আমার কিছু লাগবেনা৷
-লাগবেনা বল্লে হবেনা, এটা নিয়ম আজ রাতে তুমি কিছু চাইবে আমি দিবো৷
—আবারো বল্লাাম আমার কিছু চাইনা,  কিছুই লাগবেনা ৷
—না বল্লে তো হবে না কিছু একটা চাইতেই হবে! টাকা চাইতে পারো বা গহনা, অথবা অন্য কিছু৷
-কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে বল্লাম আমি পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চাই এ বিষয়ে সম্মতি দিলেই হবে৷
আমার কথা শুনে লোকটা বেশ সমস্যায় পড়ে গেলো বুঝলাম সে খুব অহঙ্কারের সহিত বল্লেন অামার তো টাকা পায়সার অভাব নেই,তাছাড়া বউ কে দিয়ে তো চাকরী করাবোনা তাহলে পড়ালেখা করে আর কি করবে  ?
কি উত্তর দিবো খুঁজে পেলামনা, চুপচাপ বসে রইলাম ৷
সে আবার বল্লো অন্য কিছু চাও!
আমি বল্লাম আমার এ ছাড়া অন্য কিছু চাইবার নেই৷
ভদ্রলোক আশ্বাস দিলেন ঠিকাছে তুমি পড়ালেখা করবে৷
আবার বেশ কিছুক্ষন নিরবতা! 
তারপর বল্লেন তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো, কাল তোমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে,
যে বিষয়গুলো বলবো তা এখনি বলে দেয়া ভালো,কারন আমাদের বাড়ির লোক সংখ্যা অনেক সবাই যে আমার শুভাকাঙ্খি তেমনটা নয়-সব ভাইদের মধ্যে আর্থিক অবস্থা আমার বেশি ভালো তাই আমার শত্রুও বেশি!
আমি এবার বিয়ে করার জন্য দেশে আসিনি, চিন্তা ভাবনা ছিলো আরো পরে বিয়ে করবো৷
অনেকটা চাপে পড়ে তোমাকে বিয়ে করতে হয়েছে৷ যে তোমাকে দেখতে এসে চেইন পড়িয়ে দিয়েছে তার শালির সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো!  ভেবেছিলাম সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো, কিন্তু আমার মা চাননি আপন দুইবোনকে এক বাড়ির বউ করতে৷ এ বিষয় নিয়ে অনেকদিন পারিবারিক ভাবে তাদের সাথে ঝামেলা হয়ে আসছে ৷ শেষ পর্যন্ত মা আর বড় ভাইয়ের চাপে পড়েই এখন বিয়ে করতে হলো৷
লোকটা তার প্রেমালাপ শেষ করে আবার পড়ালেখার বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলেন - বড় ভাইয়েরা, মা তারা তোমার পড়া লেখার বিষয়ে আপত্তি করবে,তবুও আমি যেহেতু কথা দিয়েছি সে ব্যবস্থা করে দিয়েই যাবো ৷
-মৃদু স্বরে আবার হ্যাঁ বল্লাম,আর জানতে চাইলাম আপনি কত দূর পড়ালেখা করেছেন ?
তিনি একগাল হেসে বল্লেন আমি তো পড়ালেখা করিনি! ১১ ভাই বোনের খুব অভাবের সংসার ছিলো, কোন ভাই বোনেরই পড়ালেখা হয়নি৷ খুব ছোট থেকেই কাজ করে খেতে হয়েছে আমাদের!
আমি খুব অবাক হলাম, আর অাব্বুর উপর প্রচন্ড রাগ হলো তারা জেনেশুনে এভাবে মূর্খ একটা ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো ?  খুব কান্না পাচ্ছিলো তখন ৷
ভদ্রলোক আবার বলতে শুরু করলেন পড়ালেখা করে কি লাভ ?  এ সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?  প্রয়োজনে তো আমাদের কাছেই আসতে হয় ৷ টাকা পয়সাই সব যার পকেট গরম সমাজ তার কথায় উঠাবসা করে৷
তার এই সব অদ্ভূদ অদ্ভূত কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিলো!  পায়ের কাছে এক্সট্রা লেপ ছিলো যেটা দাদী ইউজ করতেন, লেপ ছাড়াও একটা কম্বোল দেয়া হয়েছিলো যেটা তিনি গায়ে জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন৷
আমি লেপটা গায়ে টেনে নিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম একটু চেপে শুইলে ভালো হত অামার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো,শরীরও ব্যাথা করছে৷
বলার সাথে সাথে সে সরে গেলো৷
আমি লেপে ঢেকে শুয়ে পরলাম৷
সকালে দরজা ধাক্কার শব্দে ঘুম ভাঙলো, ভদ্রলোক উঠে দরজা খুল্লেন৷
নানু রুমে ঢুকলেন এক গাল হাসি দিয়ে বরকে প্রশ্ন করলেন ঘুম কেমন হইলো ভাই?
-সে বল্লো ভালোই,তবে তার কথাটা কেমন যেন বাঁকা শুনালো,আমি আমার মতই শুয়ে রইলাম৷
কিছুক্ষন পর নানু কে উদ্দেশ্য করে বললেন দাদী নানীতে দেখি বাড়ি ঘর ভরা তা নাতনীরে কিছু শিখাই দেন নাই?
নানু আবার হাসতে হাসতে বল্লেন কেন ভাই কি হইসে ?  ছোট মানুষ তো একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে শিখিয়ে নিতে হবে৷
-ভদ্রলোক রাগত স্বরে বল্লেন এতই যখন ছোট তাহলে বিয়া না দিলেই পারতেন ৷
তাদের কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছিলোনা তাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম..........


EmoticonEmoticon