আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে রুশ দেশে যে বিপ্লব ঘটেছিল, তা পৃথিবীকে চমকে ও বদলেদিয়েছে। একদিক দিয়ে নয়, বহুদিক দিয়ে।পরিবর্তন ঘটিয়েছে চিন্তায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থায়, মানবিক সম্পর্কে ও মানচিত্রে।বহুকাল ধরে মানুষ সাম্য, মৈত্রী, ইনসাফের যে সমাজের স্বপ্ন দেখে এসেছে, অক্টোবর বিপ্লব সেই স্বপ্নকেই বাস্তবায়ন করার কাজ করেছে এবং তার মধ্য দিয়ে মানুষকে দিয়েছে আশা ও অগ্রযাত্রার পথের দিশা। ‘মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় অক্টোবর বিপ্লব মানবসভ্যতায় সূচনা করেছিল এক নতুন যুগের। বস্তুত মার্ক্সবাদী তত্ত্ব ও মতাদর্শকে ধারণ করেঅক্টোবর বিপ্লব পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করে, সৃষ্টি করে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের এক নতুন আন্তর্জাতিকতা । শতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওই বিপ্লবের ঐতিহাসিক তাত্পর্য এক বিন্দুও মলিন হয়নি, বরং বর্তমান বিশ্বের গাঢ় অন্ধকারের পটভূমিতে তা আরো উজ্জ্বল ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।রাশিয়ার শ্রমিক-কৃষকমেহনতি মানুষ লেনিন ওবলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। ‘রুটি-জমি-শান্তি’ স্লোগান সামনে রেখে শ্রমিক-কৃষক-জনতার লালবাহিনী রাশিয়ার তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন বুর্জোয়া সরকারকে উত্খাত করে এক নতুন ধরনের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সূচনা করেছিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, সব ক্ষমতা ধনিক শ্রেণির পার্লামেন্টের হাতছাড়া হয়ে চলে গিয়েছিল তৃণমূল থেকে নির্বাচিত মেহনতি ও শোষিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধিদের ‘সোভিয়েতে’র কাছে। পুঁজিবাদী পথের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে মেহনতি মানুষের অভূতপূর্ব জাগরণ ও সৃষ্টিশীল শক্তির প্রকাশকে বিশ্ববাসী অপার বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছিল।প্রতিষ্ঠিত শোষণ ও নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র কাঠামোটিকে ভেঙে অক্টোবর বিপ্লব যে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করল তার ফলে অনেক পুরনো ধারণাভেঙে গেল। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নতুন অর্থ উন্মোচিত হলো। এই বিপ্লব বুঝিয়ে দিলযে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম শর্ত হচ্ছে দার্শনিক ইহজাগতিকতা ও রাজনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষতা ।
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭
অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষের ডাক

Tags
Artikel Terkait
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
EmoticonEmoticon