শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

সরকারপতি কিংবা রাষ্ট্রপতি হলে আমি কী শপথ নেবো?

আমরা সম্ভবতঃ কেউই নির্দোষ নই; অথচ আমরা চাই আমাদের দলপতি, সরকারপতি, রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, সবাই যেনো নির্দোষ হন। এই চাওয়ায় দোষের কিছু নেই। তবে, তা অবস্তাব হয়ে যায় তখনই, যখন আমরা ভাবি এই পতিদের হতে হবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্মল ও নির্দোষ চরিত্রের।

এই প্রত্যাশা আমারও ছিলো শৈশবে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে-সাথে মনে এই উপলব্ধি হয়েছে যে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্গুণ ও নির্দোষ মানুষ হয় না। গুণে ও দোষে মিলেই মানুষ 'মানুষ' হয়।

সত্যি, আমি যখন অন্যের দোষ ধরি, তখন আমি ভাবিঃ আমি কি এই দোষ থেকে মুক্ত? সত্য বলছি - বিনয় নয় - আমার দোষের তালিকা আমার কাছে এতো দীর্ঘ, যে অন্যে দোষের তালিকা তার নিকটবর্তী নয়। কারণ, আমি আমাকে যতো জানি, অন্যকে ততো জানি না।

তারপরও আমি দেশ-জাতি-পৃথিবী নিয়ে ভাবি এবং নতুন ভাবনাসমূহকে সূত্রাবদ্ধ করে আমার দেশ-জাতির জন্যে নতুন পথের সন্ধান করে তাতে নিজেকে অগ্রপথিক হিসেবেও কল্পনা করি। ভাবতে গেলেই মনে হয়, আমিতো আমার অতীতের ভুলগুলো জানি, যার জন্যে আমি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দিয়েছি; কিন্তু অন্যেরা যদি সেই ভুলের কথা জানে, তারা কি আমাকে ক্ষমা করবে?

আমি অন্যের ভুল ক্ষমা করি নিজের ভুল ক্ষমা করি বলে। তাই প্রত্যাশা করি, অন্যেরাও আমার ভুল ক্ষমা করবে, কারণ তারা নিজেরাও নিজদের ভুল ক্ষমা করেই বেঁচে আছে। আসলে, মানুষ ঈশ্বের প্রতি যে ক্ষমাশীলতার গুণ আরোপ করে, তা মূলতঃ তার কাঙ্ক্ষিত আত্মগুণই।

আমি ভাবি, আমি যদি কখনও বাংলাদেশের সরকারপতি কিংবা রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিই, আমি বলবো কী বলবো। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার ভেবেছি। আমার মনে হয়, আইনগত পূর্ণতার জন্যে আমাকে যা-ই বলতে হোক না কেনো, তার সাথে আমি আরও বলবোঃ

'আমার জীবনে আমি অনেক ভালো কাজের পাশাপাশি কিছু মন্দ কাজও করেছি। না-বুঝে করেছি, বুঝে করেছি এবং কখনও কখনও বাধ্য হয়ে করেছি, যার জন্যে আমি দুঃখিত ও অনুতপ্ত। তবে, আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি নবজন্ম লাভ করে শপথ নিচ্ছি যে, বাকী জীবনে আমি লোভ, ঘৃণা বা ভয়ের বশবর্তী হয়ে নিজের জন্যে কিংবা অন্যের জন্যে কখনও কোনো অন্যায় করবো না - এমনকি এতে যদি আমার জীবনও যায়।'

আমি স্বভাবতঃ প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী বলে সত্যি সত্যিই আমি জীবন দিয়ে হলেও আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

১৪/১০/২০১৭
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড


EmoticonEmoticon