মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

"গল্প নয় সত্যি" - ০৬

প্রথম যখন মেয়েকে দুধ পান করাই সেদিনই প্রবলেমটা বুঝতে পারি৷ ও যখন নিপেল চুষতে থাকে মনে হত ভিতরের প্রতিটি রগ ছিড়ে বেরিয়ে আসবে!
তবুও কষ্ট করে দুধ পান করাতাম৷ সপ্তাহ খানেক বাদে স্তনের অবস্থার আরো অবনতি হলো, তখন আর দুধ পান করানোর অবস্থায় ছিলামনা ৷ যখন ডাঃ কাছে গেলাম ডাঃ দুধ পান করাতে বারণ করে দিলেন যতদিন সমস্যা ঠিক না হয় ৷
বেবীর ১৬ দিন বয়সে তার বাবা প্রথম ফোন করেন ৮/৯ মাস পর৷
কোন রাগ বা ক্ষোভ ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছিলাম তার সাথে, এরপর  তাদের বাড়ী থেকেও অনেকে এসেছিলো মেয়েকে দেখতে ৷
প্রায় পনেরো দিন পর মেয়েকে আবার দুধ পান করানো শুরু করি, তখনও স্তনের সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি৷ দুধ পান করানোর পর থেকে আরেক সমস্যা শুরু হয় মেয়ের ডায়রিয়া হয়ে যায় ৷ স্যালাইন বা কোন ওষুধে কাজ হয়না৷ ডাঃ পরামর্শে আবার দুধ পান করানো বন্ধ করে দেই৷
পঁচিশদিন বয়সে তখন মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় চোখ বসে যায়, মাথার সামনের অংশটা এতটাই বসে যায় যে দেখলে মনে হত মাথাটা দু ভাগ হয়ে গিয়েছে, কেউ দেখলেই বলত আর বেশিক্ষন বাঁচবেনা৷
পঁচিশদিন বয়সে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসি চিকিৎসার জন্য ৷
আম্মু, আমি আর মেয়ে ৷
ঢাকার মহাখালীতে এক সপ্তাহ থাকার পর মেয়েটা সুস্থ হয়, সেখান থেকে চলে যাই সাভারে আব্বুর কাছে৷
অতিরিক্ত স্যালাইনের পানি খাওয়ানোর জন্য মেয়ের প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে যায় তার থেকে নিউমোনিয়া,  আবার ভর্তি হতে হয় হসপিটালে ৷
ঐ টুকু বাচ্চাকে যখন হাত পা চেপে ধরে নাক দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে কফ পরিস্কার করা হত তখন কি পরিমান চিৎকার যে মেয়েটা করত সে দৃশ্য আমার জন্য বেশ ভয়ঙ্কর ছিলো৷
সেখানেও  সপ্তাহ খানেক থেকে বাসায় ফিরি ৷
এরপর মেয়েটা বেশ সুস্থ, স্বাভাবিক ছিলো, একটা বছর ও কেটে গেলো৷
দেড় বছর পর মেয়ের বাবা আবার দেশে আসেন৷ আমরা কেউ সে ব্যাপারে অবগত ছিলামনা৷ ততদিনে আব্বুও একটু বেকে বসলেন আমাকে আর দিবেননা বা দিলেও দুই পক্ষ বসে বিষয়টার সঠিক সমাধানে গিয়ে তারপর দিবেন ৷
দেশে যতদিন থাকেন তখন এক রকম প্রবাসে চলে গেলে আরেক রকম, ঠিকমত খোঁজ খবর নিবেনা এ সব মেনে নেবার মত নয় ৷
আমাদের বাড়ীতেই দুই পক্ষ বসলেন, সেদিন মেয়ের বাবাকে দুই পক্ষের প্রতিটি মানুষ বেশ কথা শুনিয়েছিলেন, দেন আমাকে সেদিন তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন ৷
তার সমস্ত ক্ষোভ জমা পড়ে থাকে আমার জন্য, আমাকে তাদের বাড়ী নেবার পর থেকে চলে মানসিক অত্যাচার,সাথে অসংখ্য উপদেশ, আমি বাবার বাড়ীর কারোর সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারবোনা৷
যদি তেমনটা করি আমাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে৷ বাবার বাড়ীর চেয়ে ও বাড়ীর হাজার কঠোর নিয়মের মধ্যে থাকা ও আমার জন্য ভালো ছিলো৷
সব মেনে নিলাম৷ বাবার বাড়ীর সকলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম ৷
গৃহস্থ বাড়ীর বউ বলে কথা, কাজ না করে উপায় কি ?
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, পালা করে গোয়াল ঘরের গোবর পরিস্কার করা, গোবর দিয়ে উঠাল লেপা, ঘর লেপা, ধান সেদ্ধ, হলুদ মরিচ বাটা সব করতে হত ৷
অথচ কোন দিন এসব কাজ করা হয়নি ৷
মাস খানেক পর মেয়ের বাবা চলে যান তার কর্মস্থলে, 
এরপর চারটা মাস কিভাবে কাটিয়েছি জানিনা তারপর থেকেই মেয়েটা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে, হঠাৎ করেই মেয়ের পায়ের হাঠু আর গোড়ালির মাঝের অংশ ফুলে গিয়ে ফেঁটে ফেঁটে লালচে হয়ে যেতে থাকে৷ প্রচন্ড ব্যাথা হয় স্পর্শ করলেই চিৎকার করত৷
মেয়ের দাদী চাচাদের যখন ডাঃ  দেখানোর কথা বলি তারা তেমন গুরত্ব দেয়না, মেয়ের দাদী বলে এ রোগ ডাঃ সারাতে পারবেনা কবিরাজ দেখাতে হবে, তারা তাই করলো কবিরাজ দেখাতে শুরু করলো!  কবিরাজ কি সব পাতা দিতো তা বেটে মেয়ের পায়ে প্রলেপ দিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখত৷
তাতে মেয়ের অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগল ভেজা অবস্থায় থকার জন্য ক্ষত জায়গা আরো খারাপের দিকে গেলো৷
সারারাত মেয়ে যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারতোনা ৷তবু তারা ডাঃ দেখাবে না ৷
এভাবে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো, যতই দিন যায় মেয়ের অবস্থার অবনতি হয় - হাত, পা, পেট ফুলে যায়!  প্রস্রাব, পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়৷
আমি প্রচন্ড ভেঙে পড়ি৷ নিরুপায় হয়ে অবশেষে আব্বুকে ফোন করি, খুব কান্নাকাটি করি,  বলি যেভাবেই হোক আমাকে যেন খুব দ্রুত নিয়ে যায় ৷
আব্বু পরদিনই এলেন সবাইকে খুব অনুরোধ করলেন আমাকে দেবার জন্য, আব্বু বলেছিলো ঢাকা নিয়ে ডাঃ দেখিয়ে আজকেই দিয়ে যাবো৷
কেউ রাজি হলো না, সবার একই কথা মেয়ের বাবার নিষেধ তাই দেয়া যাবে না ৷
আব্বু  যখন চলে যাচ্ছিলেন আমি আব্বুর পা জড়িয়ে ধরেছিলাম যেন আমাকে নিয়ে যায়,  খুব কেঁদেছিলাম আর আব্বুকে বলেছিলাম আমার মেয়েটা বাঁচবেনা ৷
আব্বু আমাকে অবাক করে দিয়ে বল্লো মরলে এ বাড়ির মেয়ে মরবে তোর সমস্যা কোথায় ?
আব্বুকে আর একবারো অনুরোধ করিনি,  সে চলে গেলো, আমি শুধু দাড়িয়ে তার চলে যাওয়াটা দেখেছিলাম.......


EmoticonEmoticon