ট্রেনে করে কাজে যাচ্ছিলাম, স্টেশন চলে এসেছে আমি নামাবো, এমন সময় ট্রেনের ভিতরে সামনে থেকে, মুখে লম্বা দাড়ি, টাকনুর উপরে উঠানো সাদা পায়জামা, মাথায় টুপির উপরে সাদা পাগড়ি, চোখে সুরমা, গায়ে সাদা জোব্বা পরিহিত এক হুজুর ভদ্রলোক আমাকে হাত উঁচু করলেন, আমি আচমকা ঘাবড়ে গেলাম, তিনি ধিরে ধিরে কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন আমি হাসান, উত্তরে বললাম আমি শামীম পারভেজ।
ট্রেন থেমে গেছে, একটু ব্যাস্ত ছিলাম, নেমে পড়ব, আমার হাত ধরে উনিও নামলেন। আমার বুক দুরু দুরু কাঁপছে, আশপাশের পথযাত্রি মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে বেশ বুঝতে পারলাম। খুব বিব্রত হচ্ছিলাম।
স্টেশানটা উপরে হওয়াতে চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে, আমি ডান পার্শ্বের সিঁড়ি দিয়ে নামার জন্য বাক নিলাম, উনি হাতটা টান দিয়ে বাম পার্শ্বের সিঁড়ি দেখিয়ে বললেন- "আসুন এখান দিয়ে নামি।" প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও নামতে হলো কারণ উনি আমার হাতটা তখনো ধরে রেখেছেন।
নামতে নামতে উনি বয়ান শুরু করলেন, ক্ষণিকের দুনিয়ায় এসেছি আমরা, একদিন মরে যাবো তাই নামাজ পড়ার জন্য অনুরোধ করলেন, কোরআন দুরুধ পড়ার কথা বললেন, আরো বললেন ইউরোপে ভালো কথা কেউ বলেনা, সবাই বেহাইয়ার মতো চলাফেরা করে, রাস্তায় বের হলেই চোখের জিনায় প্রচুর গুনা হয় আমাদের। তাই যেন যত সময়টা পারি মসজিদে সময় দেই, আল্লাহকে স্বরণ করি, ইমান আমল নিয়ে থাকি এবং আমাকে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।
মসজিদে যাওয়ার ঠিকানা দিতে চাই্লে আমি বললাম ঠিকানা লাগবে না, আমি খুঁজে নিবো, এখন একটু তাড়া আছে আমি যাই।
নাম্বার চাইলে বললাম মোবাইলটা ভুল করে বাসায় ফেলে এসেছি, নাম্বার মুখস্ত নেই।
ঐটুকু সময় আমি খুব বিব্রত অবস্থায় ছিলাম এই কারণে যে, আজকাল ইউরোপ কান্ট্রিতে জোব্বাধারী দেখলে পথচারীরা সন্দেহের এবং ভীত চোখে তাকায়। আমার ব্যাপারেও অন্যথা হয়নি, পথচারীরা ঘুরে ঘুরে আমাদের দেখছিলো।
ভদ্রলোকের সাথে কথার ফাঁকে আমি এটুকু আঁচ করে নিয়েছিলাম যে, এই লোক প্রায়ই বাংগালি পথচারীদের তার শিকার বানিয়ে থাকেন কারণ তার বয়ান শুনে বোঝা গেছে পথেঘাটে লোকজন ধরে বয়ান দেয়াতে সে বেশ অভিজ্ঞ।
অবশেষে বিদায় হলো, আমিও নিশ্বাস ছেড়ে বাঁচলাম, চলে আসলাম আমার গন্তব্যে।
তবে আসার পর থেকে একটা কথাই ভাবছি, ইউরোপ যদি এতই খারাপ হয় তাহলে সে কেন এসেছে ইউরোপে? ইউরোপের রাস্তায় বের হলেই যদি চোখের জিনা হয় তাহলে এই জিনার ভিতরে সে কেন চলাচল করে? ইউরোপের মানুষ যদি ভালো কথা না বলে তাহলে এই খারাপের ভিতরে সে কেন আসলো?
উত্তর খুঁজে পাইনি, তবে এতটুকু বুঝলাম এই মানুষগুলো বড়ই নেমকহারাম এবং বেঈমান। এরা এদেশের হাওয়া খাবে, এদেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে আবার এদেশকে, এদেশের মানুষকেই খারাপ বলবে।
আর ইউরোপের রাস্তায় মেয়েদের সর্ট পোশাকে এদের ঈমানি চেতনা দাঁড়িয়ে গিয়ে চোখ দিয়ে ধর্ষন করে হবে ধর্ষক, কিন্তু দোষটা আস্তের উপরে চাপিয়ে দিবে মেয়েদের উপর।
তাই বলছি অতি ঈমানদার ভাইয়েরা আপনারা ইউরোপ আমেরিকা না এসে যদি সৌদিআরব, দুবাই, কাতার, আরব আমিরাতের যেকোনো দেশের দিকে যান, তবে আপনারা চোখের জিনা থেকে রক্ষা পাবেন এবং ঈমানও ঠিক থাকবে।
উপরন্তু পথে ঘাটেব আমাদের মত খেটে খাওয়া ব্যাস্ত পথচারিকেও বিরক্ত-বিব্রত অবস্থায় পড়তে হবেনা।
বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭
আসুন এখান দিয়ে নামি...

Tags
Artikel Terkait
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
EmoticonEmoticon