বাংলাভাষা যারা শাসন করছেন নানা রকমের নিময় উদ্ভাবন করে, তাদেরকে আমার কখনও কখনও কাণ্ডজ্ঞানহীন বর্ণবাদীর মতো মনে হয়। আমি সকলকে এই প্রতিষ্ঠানটির কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে আহবান করছি।
মনে করা যাক, হবুচন্দ্র রাজার রাজ্যে গবুচন্দ্র মন্ত্রী ঘোষণা করলেন, 'আজ থেকে দেশী খাদ্য ভাত মুখ দিয়ে খাওয়া যাবে, কিন্তু বিদেশী খাদ্য আর মুখ দিয়ে খাওয়া যাবে না, নাক দিয়ে খেতে হবে'। ভাবুন, এতে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে!
মায়েরা শিশুদেরকে আর মুখ দিয়ে খেতে নুডুলস খাওয়াতে পাবেন না, এগুলো নাক দিয়ে ঢুকাতে হবে। এতে শিশুর দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে, তথাপি মুখ দিয়ে বিদেশী খাদ্য নুডুল খাওয়ানো যাবে না, ওষুধ খাওনো যাবে না; কারণ এটি আইন!
হয় গবুচন্দ্র! তোমাদেরকে কে বুঝাবে যে, খাদ্য দেশী হোক কিংবা বিদেশী হোক, তা নাক দিয়ে ভক্ষণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি আমাদেরকে খাদ্য গ্রহণের জন্যে মুখ তৈরি করে দিয়েছে, যার কাজ নাক দিয়ে করা সম্ভব নয়।
বাংলা একাডেমি/একাডেমী নিয়ম করেছে, বিদেশী শব্দের বানানে আর 'ণ' ব্যবহার করা যাবে না। তাই, হবুরাজ্যের অনেক নাগরিক আমার 'লণ্ডন' লেখায় ভুল ধরেন; অথচ আমাদের পূর্বপুরুষেরা শুরুতে 'লণ্ডন'ই লিখতেন, 'লন্ডন' লিখতে না।
আমি বার-বার বলেছি, এই বিশ্বে কোনো মানুষের পক্ষে দন্ত্য-'ন' উচ্চারণ করে 'ড' উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। 'ন'র পর 'ড' উচ্চারণ করলে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে 'দ' উচ্চারিত হয়ে যাবে। ফলে, ল+ন+ড+ন উচ্চারিত হবে 'লন্দন'।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা ট-বর্গ লিপিবদ্ধ করেছেন এভাবেঃ ট ঠ ড ঢ ণ। আর, ত-বর্গ এভাবেঃ ত থ দ ধ ন। কেনো করেছে এভাবে? তাঁরা করেছেন এটি দেখাতে যে, ট-ঠ-ড-ঢ'র সাথে কখনও দন্ত থেকে উচ্চারিত দন্ত্য-ন উচ্চারণ করা সম্ভব নয়; করতে হবে মূর্ধা থেকে মূর্ধন্য-ণ। একইভাবে ত-থ-দ-ধ'র আগে মূর্ধন্য-ণ উচ্চারণ করা যাবে না, করতে হবে দন্ত্য-ন।
বাংলা একাডেমি/একাডেমীর কাণ্ডজ্ঞানহীন গবুচন্দ্ররা বাঙালীকে নাক দিয়ে ভাত খাওয়ার মতো এক অসাধ্য কর্ম সাধন করতে বলেছেন শুধুমাত্র বিদেশী শব্দের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করতে গিয়ে। তারা এই সত্য মানতা নারাজ যে, ন+ড উচ্চারণ করা মনুষ্য নামক প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়।
বাংলা একাডেমি/একাডেমীর এহেন গবুচান্দ্রিক নিয়মের পেছনে যুক্তি কী? কোনো ভাষাতাত্ত্বিক যুক্তিই তাদের নেই। হবুরাজ্যের গবুদের আরেকটি নিয়ম হচ্ছে বিদেশী শব্দের বানানে আর দীর্ঘ-ঈ কার ব্যবহার করা যাবে না। এরও কোনো যুক্তি নেই।
এই নিয়মের ফলে বাঙালী মেষ বুঝাতে sheep (শীপ) বলতে গিয়ে বলে 'শিপ' (ship) - অর্থাৎ জাহাজ। একইভাবে, bedsheet (শীট) বলতে গিয়ে বলে 'বেডশিট' (bedshit) - অর্থাৎ 'বিছানার চাদর' বলতে গিয়ে বলে 'বিছানার গু'।
এই হচ্ছে হবুচন্দ্রের দেশে গবুচন্দ্রদের কাজের ফল। ওরা গোটা জাতিকে একটা মূর্খ ও গোঁয়ারের জাতিতে পরিণত করতে চলেছে।
আমি বাঙালী, বাংলা আমার মাতৃভূমি, পিতৃভূমি, বাংলা আমার ভাষা বিধায়, এই মূর্খতা ও গোঁয়ার্তুমির বিরুদ্ধে নিঃসঙ্গ সৈনিকের মতো লড়ছি। আমার ক্ষমতা সীমিত; লেখালেখি ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা আমার নেই।
এই লেখার মাধ্যমে আমি আমার বাংলা-মায়ের সন্তান-সন্ততিদের প্রতি অনুরোধ করছিঃ দয়াকরে আমার কথার যুক্তিগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন এবং বাংলা একাডেমী/একাডেমির অযৌক্তিক নিময়গুলো অস্বীকার করুন - বিদ্রোহ করুন!
০৮/১০/২০১৭
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
EmoticonEmoticon