মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭

লুট আর হরিলুট...

লুট আর হরিলুটের মধ্যে  পার্থক্য আছে বিস্তর, আবার দুটোকে মোটামুটি এক ও বলা যায়! লুট হল হরণ করা/কেড়ে নেয়া/ডাকাতি করা/ছিনতাই করা/জোর করে আদায় করা। হরিলুটের সাথে ধর্মের কিছুটা সম্পর্ক আছে! সম্ভবত হরির নামে হিন্দু  ভক্তবৃন্দের সমাহার/জমায়েতে ফল-ফলাদি/কদমা/বাতাসা ছিঁটিয়ে মারা হয় বলেই এটার নাম হরিলুট! আর ভক্তবৃন্দ/পূণ্যার্থীরাও যে যতটা পারে মাটি/ঘাস/রাস্তা হতে ছুড়ে মারা প্রসাদ কুঁড়িয়ে নেয়। ফলে প্রতিটি হরিলুটেই ঠেলাঠেলি/প্রতিযোগীতার ফলে অনেকেই আহত হয়! দেখা যায়, কেউ কদমা/বাতাসা পায় পাঁচ/ছয়টা! কেউ আবার একটাও না! শেওরাতলীতে  প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটা দিনে হিন্দুদের কি একটা উত্‍সব অনুষ্ঠিত হতো, এখনো হয়। দলে দলে হিন্দুরা ঢোল/কর্তাল/তবলা বাজিয়ে এখানে সমবেত হয়। শেওরাতলায় মূলত তিনটি শেওরাগাছ তলায় ভক্তি মেরে যে যেটা পারে ফল-ফলাদি এনে রেখে সংলগ্ন মাঠে বসে সারাদিন কীর্তন আর ভজন গায়। আমরা কয়েকজন মুসলমান ছেলেপিলে সেখানে উপস্থিত হতাম মূলত হরিলুটের প্রসাদ পেতে। কেউ কদমা/বাতাসা এক দু মুঠো ছুঁড়ে দিতো। কেউ ছুঁড়ে দিতো কয়েকটা কলা একটা দুটো আপেল কিংবা কমলা! সেগুলো পাবার জন্য সে কি মারামারিরে! আমরা আরেকটা কাজ করতাম, সেটা হল, তারা সকলে যখন কীর্তনে মগ্ন থাকতো তখনি সুযোগ বুঝে একেকজন দৌড়ে একেকবারে যতটা আপেল/কমলা/বাতাসা/কলা যেটা হাতে উঠে নিয়ে দৌড়! কীর্তনে ব্যস্ত থাকায় তারা তখন কিছুই করতে পারতোনা/বলতে পারতোনা। একেকবার কীর্তন শেষ হলে দুয়েকটা ধমক-ধামক এই শেষ! ওরা সারাদিন কীর্তন করতো, দিন শেষে প্রসাদ নিয়ে বাড়ি ফিরতো। আমরাও তাদের সাথেই বাড়ি ফিরতাম পকেট ভর্তি করে আপেল/কমলা/কদমা/বাতাসা নিয়ে। তবে এখন আর আগের মতো প্রসাদ ছিনতাই করা যায়না, কারন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এসবে আর আগ্রহী নয়, দ্বিতীয় কারন শেওরাতলীকে পাঁকা করে একটু উচু করা হয়েছে। আগের মতো টিলার একপাশে ঘাঁপটি মেরে সুযোগ বুঝে দৌড় দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফল-ফলাদি ছিনতাই করে নিরাপদে ফিরে আসাটা এখন মোটামুটি বেসম্ভব কাজ। তাই এখনকার ডিজুস পোলাপান এখন এগুলোতে যায়না, পকেট ভর্তি করে ফলার ও নিয়ে আসেনা। যাক সে কথা, লুট আর হরিলুট শব্দ দুটো এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। রাষ্ট্রীয় ভাবে আমাদের দেশের সম্পদ সরকারের হাতে জিম্মা দেয়া। এগুলোকে তারা লুটেপুটে খাবে নাকি তাদের সকলে মিলে হরিলুট করবে সেটাও তাদের এখতিয়ার। মূলত জনগণের আমানতের খেয়ানত করাই আমাদের দেশের সরকারগুলোর অবিচ্ছেদ্দ সংস্কৃতি। আর এগুলো তারা করছেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে! বেসিক ব্যাংক/সোনালী ব্যাংক/বাঙলাদেশ ব্যাংক লুটের কথা সকলেই জানে। শেয়ার বাজারের ত্রিশ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারী মূলত হরিলোট । যদিও কেউ তাদের সেই টাকা ছুঁড়ে মারেনি, তথাপি তারা মিলেমিশে প্রতিযোগীতা করেই টাকাগুলো হজম করেছে, যেটাকে আমরা হরিলুট বলতেই পারি! ডেসটিনি/হলমার্ক/জিএমজি এয়ারলাইনস কেলেঙ্কারি শুধু লুট বা হরিলুট নয়, রীতিমতো জুয়াচুরি। তা মাননীয় মন্ত্রীসাহেব, লুট হোক অথবা হরিলুট! যেটাই হোক, আপনাদের পকেট যে ফাঁকা থাকবেনা সেটা আমরা ভালো করেই জানি। মাতলামি একটু কম করুন। আমাদের দেশের নেতাখেতারা যে স্বীকৃতি প্রাপ্ত চোর/ডাকাত/লুটেরা! সেটা স্বীকার করলেই কি আর না করলেই কি? একটা প্রকল্প হবে আর আপনারা সে টাকার অনেকটা অংশ লুটেপুটে খাবেন না, সেই গ্যারান্টি কি স্বয়ং ফেরেশতারাও দিতে পারবে?


EmoticonEmoticon