শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

আ ফ ম মাহবুবুল হক

আ ফ ম মাহবুবুল হক মারা গেছেন! একসময় বাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা অবস্থায় তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছিলাম। কারণ হল জাসদ থেকে বেরিয়ে কমরেড  খালেকুজ্জামান ও মাহবুব ভাইয়েরা বাসদ গঠন করেছিলেন একটি বিপ্লবী দল গড়ে তোলার লক্ষ্যে। কিন্তু বাসদ গঠনের তিন বছরের মাথায় তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মূল কারণ ছিল একদল চেয়েছিলেন এদেশে ভারতের SUCI (C) পার্টির বাংলাদেশ শাখা গঠন করতে। যার মূল বক্তব্য হল দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের সম্পত্তি দলের নামে লিখে দিতে হবে, দল ই জীবন বিপ্লবী জীবন এই ধারণায় নেতাদের হোল টাইম রাজনীতি করতে হবে, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা পুরোপুরি যাচাই না করে বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক এইগুলো ছিল মৌলিকভাবে এসইউসি আই এর লাইন। তখনো শিবদাস ঘোষকে আথোরিটি ঘোষণা না করলেও শিবদাস ঘোষের প্রকাশনা ছিল বাসদের অন্যতম রাজনৈতিক চর্চার সাহিত্য।

কিন্তু কমরেড মাহবুবুল হক তখনো সব বিষয়ে এসইউসি আই নীতি মানতে রাজি ছিলেন না। তাঁর বক্তব্য ছিল আরেকটি দেশের একটি পার্টির রাজনৈতিক লাইন হুবহু এইদেশে গ্রহণ করা মার্ক্সবাদ সম্মত নয়। আবার পার্টির রাজনৈতিক সংগ্রাম এমন পর্যায়ে পৌছায়নি যে নেতাদের সব সম্পত্তি পার্টির নামে দিয়ে দিতে হবে এবং ব্যক্তিগত জীবনযাপন ছেড়ে দিয়ে একমাত্র দল ছাড়া কিছু করা যাবে না। আমার মনে হয় তাঁর বক্তব্য সঠিক ছিল কিন্তু অনুকরণ প্রিয় খালেকুজ্জামান এবং হায়দার চৌধুরী দল থেকে বেরিয়ে একই নামে আলাদা পার্টি করলেন। এর মধ্যে মাহবুবুল হক এর স্ত্রীর সাথে মাহমুদুর রহমান মান্নার ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের কারণে সম্পর্ক ঘোলাটে হয়েছিল। কিন্তু মোল্লাপন্তী খালেকুজ্জামানরা কোন ছাড় দিতে নারাজ। কারণ রক্তমাংসের মানুষের নারী পুরুষের যৌনতা থাকতে পারে না। আর তা যদি একটু ব্যতিক্রম হয় তখন সেখানে কট্টর মোল্লাতন্ত্র কায়েম হবে। কিন্তু আলাপ আলোচনায় এই সমস্যার সমাধান করা যেত। এটা বড় ধরণের সমস্যা ছিল না। সমস্যা হল নারী পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা পুরাতন ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে না পারা। আবার ব্যক্তিগত সম্পত্তি দলের নামে লিখে দেওয়ার ফল হয়েছে ২০১৩ সালে যখন আবার দল ভাঙ্গে তখন খালেকুজ্জামান এর বাসদ সব সম্পত্তি পেয়ে যায় অন্যরা বঞ্চিত হয়।

সেই খালেকুজ্জামান ২০১৩ সালে এসইউসি আই এবং শিবদাস ঘোষকে আথোরিটি না মানার কারণে পার্টি দুইভাগ হয়ে আলাদা আলাদা দল হল। একদল এসইউসি আই এর বাংলাদেশ শাখা রয়ে গেল আর আরেকদল নিজেদের স্বতন্ত পরিচয় নিয়ে আলাদা হয়ে গেল যা ১৯৮৩ সালে আ ফ ম মাহবুবুল হক এর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মৌলিক পার্থক্য ছিল না। কিন্তু তখন পারস্পারিক বুঝাপড়ার মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী পার্টি হতে পারতো।

কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক শাখা থাকতে পারে। রুশ বিপ্লবেরর পর কমরেড লেনিনের উদ্যোগে তৃতীয় আন্তর্জাতিক গড়ে উঠেছিল দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার জন্য যার প্রেক্ষিতে ভারতে চীনে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল ইসইউসি আই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠান কিনা তার নেতা কোন আন্তর্জাতিক নেতা কিনা যার কমিউনিজম এ মৌলিক সংযোজন আছে কিনা? ভারতে নিজেদের পার্টির বাইরে ইসইউসি আই এবং শিবদাস ঘোষকে কেউ অথোরিটি মানে না। বাংলাদেশে বাসদ (মার্ক্সবাদী) হল একই ধরণের পার্টি।

যাই হোক আ ফ ম মাহবুবুল হক ত্যাগী সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। যিনি জীবনব্যাপী সংগ্রাম করেছেন জাতীয় স্বাধীনতার জন্য, সমাজতন্ত্র সাম্যবাদের জন্য। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। পুরাতন ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজতন্ত্রের লড়াই গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।


EmoticonEmoticon