বম্বেতে স্টুডিয়ো যাওয়ার পথে এক জায়গায় জুতো পালিশ করাতেন সলিল। পালিশওলার ছেলে বসে থাকত তাঁর বাবার পাশে। তাঁর নাম ছিল পান্ডুরং।
একটা ভাঙা ম্যান্ডোলিন বাজাত পান্ডুরং। সলিল তার আগ্রহ দেখে তাকে নতুন একটা ম্যান্ডোলিন কিনে দিলেন। যত্ন করে তাকে শিখিয়েওছিলেন। শেষে তাকে নিজের মিউজিক ইউনিটের সদস্যও করে নেন।
‘পরখ’ ছবিতে লতাদির ‘মিলা হ্যায় কিসিকা ঝুমকা’ গানের সঙ্গে ওই পান্ডুরংই ম্যান্ডোলিন বাজিয়েছিল। ছেলেটি অকালে মারা যায়।
একটা ভাঙা ম্যান্ডোলিন বাজাত পান্ডুরং। সলিল তার আগ্রহ দেখে তাকে নতুন একটা ম্যান্ডোলিন কিনে দিলেন। যত্ন করে তাকে শিখিয়েওছিলেন। শেষে তাকে নিজের মিউজিক ইউনিটের সদস্যও করে নেন।
‘পরখ’ ছবিতে লতাদির ‘মিলা হ্যায় কিসিকা ঝুমকা’ গানের সঙ্গে ওই পান্ডুরংই ম্যান্ডোলিন বাজিয়েছিল। ছেলেটি অকালে মারা যায়।
বাংলা আধুনিক গানের কথায় ও সুরে আভিজাত্য ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন অসামান্য প্রতিভাধর সুরকার গায়ক ও কবি সলিল চৌধুরী। তাঁর লেখা বহু গানের মূলে ছিল তখনকার পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক দৃশ্যাবলী। যেমন ১৯৪৬-এর দুর্ভিক্ষ পীড়িতা এক তরুণীকে ভিক্ষে চাইতে দেখে সৃষ্টি করেছিলেন অনবদ্য ‘সেই মেয়ে’ গানটি, রবিঠাকুরের কৃষ্ণকলির আদলে, যেটি পরে সুচিত্রা মিত্র স্বকন্ঠে রের্কড করেন। এক বিধ্বস্ত পুড়ে যাওয়া গ্রাম দেখে তিনি লিখেছিলেন ‘কোন এক গাঁয়ের বধূ’, যার জনপ্রিয়তা এখনো অক্ষুন্ন। পুরোনো দিনে যখন বেশীর ভাগ গানের উপজীব্য ছিল প্রেম, তখন সলিল চৌধুরীর গানগুলির ছিল আজকের জীবনমুখী গানের পথিকৃত।
গীতিকার-সুরকার সলিল চৌধুরী অতুলনীয়!
গানে কী সব কথা লিখেছেন সলিল! ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা।’ ‘পথ হারাব বলেই এবার পথে নেমেছি, সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ধেঁধেছি।’ রবীন্দ্রনাথের ‘লাজে লাজানো’-র পর কী অসম্ভব সার্থক প্রয়োগ এই ‘ধেঁধেছি’ কথাটায়! পাশাপাশি রোম্যান্টিক গান ! ‘মনের জানালা ধরে উঁকি দিয়ে গেছে/ যার চোখ তাকে আর মনে পড়ে না/...আর কোনও চোখ তবু মনে ধরে না।’ এই গানেরই শেষে আরও অসাধারণ দুটো লাইন— ‘শিকলে বাঁধিতে তারে চেয়েছিনু বুঝি!
গানে কী সব কথা লিখেছেন সলিল! ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা।’ ‘পথ হারাব বলেই এবার পথে নেমেছি, সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ধেঁধেছি।’ রবীন্দ্রনাথের ‘লাজে লাজানো’-র পর কী অসম্ভব সার্থক প্রয়োগ এই ‘ধেঁধেছি’ কথাটায়! পাশাপাশি রোম্যান্টিক গান ! ‘মনের জানালা ধরে উঁকি দিয়ে গেছে/ যার চোখ তাকে আর মনে পড়ে না/...আর কোনও চোখ তবু মনে ধরে না।’ এই গানেরই শেষে আরও অসাধারণ দুটো লাইন— ‘শিকলে বাঁধিতে তারে চেয়েছিনু বুঝি!
তিনি একেধারে একজন সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, কবি ও গল্পকার। মূলত বাংলা, হিন্দি ও মালয়ালাম চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। আধুনিক বাংলা গানের সুরস্রষ্টা হিসেবে এবং গণসংগীতের প্রণেতা হিসেবে তিনি একজন স্মরণীয় বাঙালি
বাবার কাছেই সলিল চৌধুরীর সংগীত শিক্ষার হাতেখড়ি। বাবার সংগ্রহে থাকা পাশ্চাত্য উচ্চাঙ্গসংগীত তিনি শুনতেন ছোটবেলা থেকেই। পিতৃব্য নিখিল চৌধুরীর কাছেও সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন তিনি। চলচ্চিত্রে মোৎজার্টের সিম্ফোনি নং ৪০-এর ওপর ভিত্তি করে ‘ইতনা না মুঝে তু পেয়ার বাড়া’।
মধ্য পঞ্চাশের পর ভারত কাঁপাতে বোম্বে যেতে আগ্রহী হলেন সলিল। তারপরই খুলে গেল আরেক সুরের দুয়ার। সর্বভারত দেখল বাঙালির প্রতিভা।
বোম্বে যাওয়ার পর সলিল শুনলেন এক প্রডিউসার নতুন ছবিতে হাত দেবেন। সলিল কাজ চাইলেন। প্রডিউসার আমতা আমতা করলেন। দুজনে নাকি সন্ধ্যার পর সাদা রঙের অ্যাম্বাসাডর গাড়ির ভেতরে বসেছিলেন। তখন বর্ষাকাল। ঝরঝর বৃষ্টি। গাড়ির জানালার কাচে বৃষ্টি। সলিল কৌতুক করে বললেন, ‘আমি তো আপনার ছবি হিট করাব বলে আগেভাগেই সুর তৈরি করে রেখেছি।’ প্রডিউসার অবাক হয়ে বললেন, ‘বলেন কী? সুর তৈরি করে রেখেছেন! আচ্ছা, শোনান তো।’ সলিল সুর ভাঁজলেন। প্রডিউসার কেঁপে উঠলেন। অভিভূত। সলিলের হাত ধরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘গানটা আর কাউকে দিয়েন না প্লিজ...।’
সলিল হেসে বললেন, ‘আরে, আপনার গান অন্যকে দেবো কেন?’
কোন গানটা?
কোন গানটা?
লতার গাওয়া ‘না যেও না/ রজনী এখনও বাকি...’
আসলে সঙ্গীত জগতে সলিল চৌধুরী একজন ভার্সেটাইল প্রতিভা ছিলেন। হেন যন্ত্রসঙ্গীত নেই যা তিনি বাজাতে জানতেন না। সুরকার সলিল চৌধুরীর সৃষ্টির পিছনে কোথাও যেন ঢাকা পড়ে যায় কবি সলিল চৌধুরী, গল্পকার সলিল চৌধুরী, নাট্যকার সলিল চৌধু।
অন্নদাতা’ ছবির গান বেঁধেছেন। শনাবেন বলে পাশে বসা কিশোরকুমার। মুখ গম্ভীর করে সলিলের পাশর সোফায় বসলেন কিশোর। খুব মন দিয়ে সুর শুনতেন উনি।
সোফায় বসে সলিল হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শোনাচ্ছেন, ‘গুজর গয়ে দিন দিন দিন কি/ হর পল গিন গিন গিন/ কিসিকি হায় ইয়াদোঁ মে’।
শেষ লাইনটি শুনেই ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন কিশোর।
‘‘কী হল, কী হল?’’ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলেন সলিল। তখনও মাটিতে থেবড়ে বসে কিশোর। মুখ নিচু। মাথা তুলে হাত জোড় করে বললেন, ‘‘আমাকে মাফ করুন সলিলদা, আপনার সমান উচ্চতায় বসে আমি এ গান শিখতে পারব না। কী সুর করেছেন!’’
এর পর বাকি সময়টা মাটিতে বসেই গান শিখেছিলেন কিশোর!
এটাই সলিল চৌধুরী, এমনই প্রতিভা!
শুভ জন্মদিন কিংবদন্তী
EmoticonEmoticon