সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম হামলার এক বছর !

গাইবান্ধা ঘটনার কিছুদিন পরে অামরা সেখানে ইউপিডিএফ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ক্ষতিগ্রস্হ পরিবারদের সাথে দেখা করি। অামরা সেখানে গিয়ে যা তথ্য পেয়েছি এবং দেখেছি তা উপস্হাপন করার চেষ্টা করছি।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর উপর ৬ই নভেম্বর ২০১৬ ইং পুলিশ ও স্হানীয় মাস্তান বাহিনী হামলা চালায়। বিনা উস্কানিতে সাধারণ জনগণের উপর গুলি বর্ষণ করে পাঁচজন সাঁওতালকে গুরুতর অাহত করে। অাহতদের মধ্যে শ্যামল হেমব্রম চিকিৎসাধীন অবস্হায় মারা যায়।পরবর্তী ৮ই নভেম্বর অারো একটি লাশ পুলিশ মিলের পার্শবর্তী গ্রামে ফেলে রেখে যায়। পুলিশের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে এই দুইজন সাঁওতাল মারা গেলেও পুলিশ এই হত্যার দায় নিতে নারাজ।একই তারিখে সন্ধ্যায় পুলিশের সহায়তায় স্হানীয় চেয়ারম্যান শাকিল অাকন্দ বুলবুলের নেতৃত্বে একদল মাস্তান সাহেবগঞ্জে সাঁওতালদের পল্লীতে প্রায় ৬০০ ঘর ও স্কুলে অগ্নিসংযোগ করে।( ছবিতে লক্ষ্যে করবেন পুলিশ এবং সাদা পোষাকে পরিহিত লোক অাগুন দিচ্ছে)
এলোপাথারি গুলি চালানোর ফলে উক্ত পল্লীর বাসিন্দারা সবকিছু ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়।অার অনেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য তীর ছুঁড়ে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।বৃষ্টির মতো পুলিশ গুলি চালায়।
সেই পল্লিতে প্রায় ২৫০০ মানুষের বাস ছিল,বর্তমানে প্রায় দুইশত সাঁওতাল সুগার মিলের পাশে জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামে অাশ্রয় নিয়েছে এবং বাকীরা পুলিশ ও মাস্তানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অামরা সেখানে গিয়ে যা দেখেছি, তারা যেভাবে রান্না,ঘুমার জায়গা সবকিছু খোলা অাকাশের নিচে। অনেকে না খেয়ে রয়েছে।
সাঁওতালদের উচ্ছেদ করার উদ্দ্যেটাই ছিল মূলত অাঁখ ফেক্টরী স্হাপন করা।
অামি ৩০- ৪০ জন নারী একত্রিত করে কথা বলেছি,তারা তাদের অনেকে কান্না করে তাদের সেই দিনগুলির  ঘটনা শুনায়।সেই দিন অনেকে গায়ে পড়নের কাপড় ছাড়া অার কিছুই বাঁচাতে পারেনি বা অানতে পারেনি বলেন তারা।
তাদের মধ্যে নেই খাওয়া দাওয়ার চিন্তা, একটাই চিন্তা তাদের ফের অাক্রমন করবে। তারা নিজের ভাস্তুভিটা  থেকে উচ্ছেদ হয়ে কোথায় ঠাই মিলবে!
সেখানে অাহত ডু ডু' র স্ত্রীর সাথে দেখা করি,তার ছোট ছোট দুটি বাচ্চা অার অন্ধ এক বাবা।তার বাবা' র সাথে কথা বলি। অামাদের কথা শুনে শুধু কান্না করছিল । তিনি অন্ধ কিছুই দেখতে পাননা।শুধু শুনেন।অামাদের কাছ থেকে তার ছেলে ফিরবে কিনা বলেন।অামরা তাদের শান্তনা দিলাম।( দুঃখিত ছবিসহ ছিল কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিনা)
অাজকে সকালে সেখানকার স্হানীয় এক ব্যক্তির সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম,প্রায় এক সপ্তাহ মতো হচ্ছে  সেখানকার  এমপি  নাকি ফের সেই জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি ভাঙা কন্ঠে বলেন,অামরা সাধারণ জনগণ অামাদের জমি দখল করলেও কি করবো ক্ষমতা পুলিশ সব তাদের হাতে।যেমনি পুলিশ অামাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলো।
সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি  বরং বিমল কিস কুরকে যখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তখন তার হাতে হাতকড়া অবস্হায় চিকিৎসা করানো হয়েছিল।
তিনি অারো বলেন,তারা এখনো খোলা অাকাশের নিচে বসবাস করছে,উৎপাদন ব্যবস্হা নেই, ফলে তারা চরম দুর্ভোগে অাছেন।
তাদের পুরো জমি তার দিয়ে ঘিরে রেখেছে।যার ফলে তারা সেখানে ডুঁকে চাষাবাদ করতে পারছেনা।
এমতাবস্তায়,বিগত এক বছর হয়ে গেলো তাদের উপর বর্বরোচিত হামলা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যেগ বা পদক্ষেপ নেয়নি। নিজের দেশের সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের স্বীকার না দেখে তিনি অন্যদেশের রোহিঙ্গাদের কাছে প্রিয়সীনি হতে চান।
সরকারের কাছে দাবি জানায় অবিলম্বে সাঁওতালদের নিজ জমিতে বসত বাড়ি স্থপনের সহায়তা করুন ।
অবিলম্বে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেফতার করুন ।।


EmoticonEmoticon