সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৮

গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা

ঢাকার একটা বেসরকারি কলেজে কিছুদিন গেস্ট টিচার ছিলাম আমি। প্রিন্সিপল ছিলেন একজন হুজুর টাইপের লোক। নাম, আবু তালেব। বাড়ি জামালপুর জেলায়।
আমি আসলে শখের বশে কাজটি নিয়েছিলাম। ছাত্রছাত্রীদের আমি ভালবাসতাম, তারাও আমাকে বোধহয় পছন্দই করত।
একদিন ক্লাসে গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কেন কাঁদছে? প্রিন্সিপল বকেছে।
কেন বকেছে? কারণ মেয়েটির নাম ছিল মমতা।
তাতে কী হয়েছে? তিনি বলেছেন যে মমতা হিন্দুদের নাম। কোনও মুসলমানেরই হিন্দু নাম রাখা উচিত নয়, এটা গুনাহ। প্রত্যেক মুসলমানেরই ইসলামী নাম রাখা উচিত।
আরও জানলাম, তিনি মেয়েটির পিতামাতার কান্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, হেয় করে কথা বলেছেন। মেয়েটিকে মালাউন বলে গাল দিয়েছেন।
আমি মেয়েটিকে শান্তনা দিলাম। বললাম, মমতা চমৎকার একটি নাম। এটা কোনও ধর্মীয় নাম নয়। তুমি এই অসাধারণ সুন্দর নামটির জন্য গর্ব করতে পার।

আমি প্রিন্সিপলের রুমে গেলাম। বললাম, আপনি মেয়েটিকে বকে ভালো করেননি, স্যার। নাম তাদের নিজেদের ব্যপার।
প্রিন্সিপলও আমাকে সরাসরি বলে দিলেন, আপনাকে আর কলেজে আসতে হবে না। আগামীকাল এসে বেতনটা নিয়ে যাবেন।
আমি আর কখনই যাইনি।
আর প্রিন্সিপল স্যারকে এটা কখনই বলা হয়নি, স্যার, আপনার নাম আবু তালেব। আর আবু তালেব ছিলেন মুহাম্মদের চাচা। তিনি একজন চমৎকার মানুষ হিসেবে সুবিদিত ছিলেন। কিন্তু তিনি ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মূর্তিপূজারী এবং তিনি কখনই মুসলমান ছিলেন না। আপনি আসলে একজন ইসলাম প্রত্যাখ্যানকারী মূর্তিপূজারীর নাম ধারণ করছেন।

আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের ধর্মের সঙ্গে নামেরও ইসলামীকরন করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু  ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন, তারা কিন্তু তাদের নাম পরিবর্তন করেননি। আবুবকর,  আলী কিংবা ওছমান। ঐসব কিন্তু পৌত্তলিকদেরই নাম। তবে আমরা কেন আমাদের নামটা পরিবর্তন করলাম? হযরত মুহাম্মাদও পৌত্তলিক নাম। আরবি কখনই ইসলামের ভাষা নয়।
আরব কাফেরদের দেশ।
আরবি কাফেরদের ভাষা।
ইসলাম প্রচারকদের সর্বগ্রাসীতা মানুষের সংস্কৃতিকেও গিলে নিয়েছে, বেমালুম!
আমি বিশ্বাস করি, আজ এই উপমহাদেশে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে যে দূরত্ব এবং বিরোধিতা, তার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকতো না, যদি আমাদের মধ্যে শুধু নামের মিল থাকতো।
বাঙালি মুসলমান ইসলাম প্রত্যাখ্যানকারী আবু তালেবের নামে নাম রাখতে পারে, তখন ইসলামের কোন ক্ষতি হয় না, বাংলায় নাম রাখলেই তাদের গায়ে ফোস্কা পড়ে যায়!
বাঙালি মুসলমানের কোন বংশ পরিচয় নেই! কোন গোত্র নেই! কোন পদবি নেই! কোন ঐতিহ্য নেই!
সব লুট হয়ে গেছে! এরা এতটাই দুর্বল মানসিকতার, এতটাই ঘৃণা রোপণ করা হয়েছে এদের মনে যে এরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে থাকে। ইসলাম ত্যাগ করেই এরা নির্দ্বিধায় নিজের রক্তের ভাইদের মালোয়ান কাফের বলে গালাগাল দিয়ে গর্ববোধ করে।
জন্মভূমি রেখে হাহুতাশ করে ধর্মভূমির জন্য। মাতৃভাষাকে অসম্মান করে হাহুতাশ করে ধর্মভাষার জন্য।
ইসলামের কী এমন ক্ষতি হতো যদি বাঙালির নাম বাংলায় হতো?

শেষে একটা কথা আছে, যদিও আরবি ইসলামের ভাষা নয় তবুও স্পষ্ট ইসলাম এই ভাষাকে দখল তথা গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে আরবি নাম আসলে এখন ইসলামকেই সাপোর্ট করে। সুতরাং কোনও নাস্তিকের জন্য অবশ্যই ইসলামী তথা আরবি নাম খুবই বেমানান। এবং বাংলা এবং বাঙালির জন্য খুবই লজ্জার।


EmoticonEmoticon