র্যাডিক্যাল প্রগতিশীল ধারার চিন্তা তারুণ্য ও যৌবনের ধর্ম। আর, এজন্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় র্যাডিক্যাল প্রগতির ধারার রাজনীতির সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা ছিলো।
১৯৭০ সালে যখন প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভৌটে ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচনের নিয়ম চালু হয়, তখন সে-সময়কার সবচেয়ে র্যাডিক্যাল ও প্রগতিশীল স্বাধীন বাংলার প্রতিষ্ঠার ধারা নির্বাচিত হয়। ছাত্র লীগের আসম আব্দুর রব ভিপি ও আব্দুল কুদ্দুস মাখান জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৭২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয় কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের প্যানেল মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। তখনও কমিউনিষ্ট পার্টি আওয়ামীপন্থী হয়নি। আর, সে-কারণেই ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের হাতে ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে ডাকসুর দেওয়া তাঁর 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রত্যাহার করতে পেরেছিলেন।
১৯৭৩ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সাথে যৌথ প্যানেলে নির্বাচন করে এবং তারা স্থায়ীভাবে আওয়ামী রাজনীতির বি-টীম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সে-নির্বাচনে জাসদের ছাত্র সংগঠনের প্যানেল মাহবুব-জহুর বিজয়ী হলেও, তা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে সে-নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেয়।
তারপর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন জাসদের ছাত্র সংগঠনের প্যানেল। বস্তুতঃ এর মধ্য দিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ১৯৭৩ সালের ছিনতাই হওয়ার নির্বাচনের উত্তর দেয়।
১৯৮০ আওয়ামী লীগের সাথে ঐক্য করা না-করার প্রশ্নে জাসদ ভেঙ্গে গেলে, বাসদ নামে নতুন দল গঠিত হয়। বাসদ গঠনের কয়েক মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন হয়ে এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জাসদের ঐক্যের বিরোধিতাকারী নেতৃত্ব হিসেবে বাসদের ছাত্র সংগঠনের প্যানেল (পুনরায় মান্না-আখতার) বিজয়ী হয়।
জাতীয় রাজনীতিতে বাসদ অন্ত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি দল হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দলের ছাত্র সংগঠনটি সে-সময়কার সর্বাগ্রসর র্যাডিক্যাল প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করতো। তাই দেখি, ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বাসদের ছাত্র সংগঠনের আখতার-বাবলু প্যানেল বিজয়ী হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণে গণ-ধিকৃত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের (যারা সে-সময় ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো) সাথে ১৯৮৯ সালে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী করে জাসদ-বাসদ-সহ তৎকালীন র্যাডিক্যাল প্রগতিশীল ক্যাম্পের ছাত্র সংগঠনগুলো। আর, এর মধ্য দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধারার স্বতন্ত্র রাজনীতি সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে আবেদন হারায় এবং প্রো-এষ্টাবলিশমেণ্ট প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র-রাজনীতির বিজয় সূচিত হয়।
আমি মনে করি, সেদিনের সেই ঐক্য ছিলো সুনির্দিষ্টভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাধারণভাবে সারা বাংলাদেশে র্যাডিক্যাল প্রগতিশীল ধারার ছাত্র-রাজনীতির আত্মহত্যার শামিল।
সেদিন যারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার পক্ষে ওকালতি করেছিলেন, আজ যখন দেখি তা্রা বড়ো-বড়ো বিপ্লবী শ্রেণী চেতনার বকুনী দিয়ে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের গুণ্ডামোর বিরুদ্ধে আহাজারি করেন, তখন আমার মনে হয় 'ভূতের মুখে রাম নাম' শুনছি।
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়ঃ সেদিন কোথায় ছিলো আপনাদের বিপ্লবী শ্রেণী চেতনা? মৌলবাদ বিরোধিতার নামে বাকশাল রাজনীতির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সেদিন যে-ক্ষতি আপনারা করেছেন, তা সম্ভবতঃ আর সংশোধনের নয়।
EmoticonEmoticon