রাঢ়িখাল আগে থেকেই বিখ্যাত একটি গ্রাম । কারণ এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল (১৪ই বৈশাখ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে রাঢ়িখালে অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুর রাশেদ এবং মা জোবেদা খাতুন।যদিও হুমায়ুন আজাদের জন্ম তাঁর নানাবাড়ি কামারগাঁও কিন্তু রাঢ়িখালকে হুমায়ুন আজাদ মনে করতেন তাঁর জন্মগ্রাম। গ্রামটি পানির গ্রাম নামেও পরিচিত ছিল। কারণ গ্রামে অনেকগুলো পুকুর ছিল। যা বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠত। আর গ্রামটিকে সেই পানির ওপর ভাসতে থাকা কচুরিপানার মনে হতো।
পড়াশুনা শুরু গ্রামেই, পড়াশোনার শুরু নিজ গ্রামেই, স্যার জে. সি. বোস ইন্সস্টিটিউশন বিদ্যালয়কেই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় বলে মনে করতেন হুমায়ুন আজাদ, যেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ।
হুমায়ুন আজাদের আসল নাম ‘হুমায়ুন কবীর’। লেখার জন্য নাম বদল করে শপথপত্রের মাধ্যমে তা স্থায়ী করে নেন। তাঁর অন্যতম প্রণোদনা ছিল প্রথা-বিরোধিতা।
জীবন, জগত ও মানুষকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন স্বাধীনচেতা মানবতাবাদী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক হয়ে নিজের মধ্যে জন্ম দিয়েছিলেন প্রগতিমুখী মুক্ত চিন্তাধারার দর্শনের। তিনি জীবনের সম্পূর্ণ রূপ, সৌন্দর্য, কদর্য-অসৌন্দর্যের রূপ চিত্রায়ণ করেছেন তাঁর লেখায়।
ধর্ম, প্রথা, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, নারীবাদিতা, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য তিনি ১৯৮০'র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কবি হুমায়ন আজাদ কবিতার গঠনরূপ সম্পর্কে লিখেছেন, “যা পুরোপুরি বুঝে উঠবো না, বুকে ওষ্ঠে হৃদপিণ্ডে রক্তে মেধায় সম্পুর্ণ পাবো না; আমি অনুপস্থিত হয়ে যাওয়ার পরও রহস্য রয়ে যাবে রক্তের কাছে, তাঁর নাম কবিতা; -যদিও আমি কবিতা লিখেছি, লিখেছি তাঁর ভাষ্য, এবং আজো গদ্যের এ-পরাক্রান্ত কালে, কবিতা লিখতে চাই”।
তিনি লিখেছেন -
‘তোমাকে মিনতি করি কখনো তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা; তাঁর রাজনীতি,
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমণ্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না, -তাঁর অনেক কারণ রয়েছে’।
অথবা -
' আমার সন্তান আজো জন্মেনি। যদি জন্মে
সে কি জন্মেই পাবে স্বাধীনতা? আমার বাবার
স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়েছিল আমার জীবনে।
আমার স্বাধীনতা কী রকম হবে আমার সন্তানের জীবনে
নাকি তাকেও বলতে হবে আমার মতোই কোনদিন
‘এতদিনে স্বাধীন হলাম।’
প্রথম উপন্যাস লিখলেন অনেকদিন পরে – ১৯৯৪ সালে। নাম ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়ে তার রাজনৈতিক লেখালিখির সূত্রপাত। ২০০৩ সালে প্রকাশিত আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম গ্রন্থটি প্রধানত রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারাবাহিক সমালোচনা। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকেই তিনি মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার পক্ষে অনুকূল বলে মনে করতেন।
সত্যনিষ্ঠ এ লেখক ২০০৪ সালের এই দেশের ক্রান্তিকালের সমাজ চিত্র তুলে ধরেন তাঁর 'পাকসার জমিন সাদবাদ' নামক বইয়ে। তার সাহস বুঝতে হলে সময়কাল তুলে ধরতেই হবে, যে সময় আজকের সময়ের জন্ম দিয়েছে !
বইটি এমন একটা সময় প্রকাশিত হয় যখন বিএনপি সমেত জামায়াত প্রথমবারের মতো ক্ষমতায়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধর্মান্ধ-উগ্র জঙ্গি দল নিষিদ্ধ থাকলেও সেনা-স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান রাজনীতি করার জন্য বিদেশ থেকে গোলাম আযম, নিজামী গংদের নিয়ে আসেন এবং বিচারাধীন এগারো হাজার রাজাকারকে মুক্ত করে দেন।
তাছাড়া সংবিধান থেকে সেক্যুলারিজম বাদ দিয়ে পাকিস্তান ও সৌদি-পন্থী উগ্র ইসলামী চিন্তাধারা প্রবর্তন করে। এরপর আরেক সেনা-স্বৈরশাসক এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে ধর্মীয় উন্মাদনা আরও কয়েক গুন বাড়িয়ে দেন। হুমকির মুখে পড়ে সেক্যুলারিজম ও উদার বাঙ্গালী সংস্কৃতি।
এরপর তথাকথিত গণতান্ত্রিক আমলে খালেদা জিয়া আফগান যুদ্ধ ফেরত মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী নামক দলে গঠন করতে সুযোগ করে দেয়। আর জামায়াতের হাত ধরে এরপর গঠিত হয় ইসলামী সমাজ, হিজবুত তাওহীদ আর জেএমবি।
কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী দল হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশে শাখা খুলে বসে। সবার লক্ষ্য একই , ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। তাই সমস্ত অমুসলিম, ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী এবং শিয়া ও আহমদিয়াদের খুন করে আর ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়াকেই তারা তাদের লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার মনে করলো।
উর্দু ভাষার কবি হাফিজ জলন্ধরি রচিত পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত থেকে নেয়া “পাক সার জমিন জমিন সাদ বাদ” শিরোনামে লেখা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামীর ধর্মকে ব্যবহার করার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসাই তার জীবনে কাল হয়েছিল।
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে ২০০৩ সালে এটি দৈনিক ইত্তেফাকের ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়। দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী জাতীয় সংসদে এই বইয়ের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছিল। এছাড়াও সাঈদী ইত্তেফাক ভবনও পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে মত দিয়ে উগ্রবাদীদের স্পষ্ট উস্কানি দেয়। হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে এর বাইরে, ওয়াজ মাহফিলে বা পার্টি ফোরামে, সাঈদী কি কি বলে থাকতে পারে সেটা অনুমান করে নেওয়া যায়।
বই এর ফ্লপ ভূমিকাটির একাংশ ছিল এইরূপ - ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টি করি একটি স্বাধীন দেশ: বাংলাদেশ । কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তিরাশি আমাদের সামনের দিকে এগোতে দেয় নি, বরং নিয়ে চলছে মধ্যযুগের দিকে; বাংলাদেশ কে ক’রে তুলছে একটি অপপাকিস্তান। মৌলবাদ এখন দিকে দিকে হিংস্ররূপ নিয়ে দেখা দিচ্ছে; ত্রাসে ও সন্ত্রাসে দেশকে আতঙ্কিত ক’রে তুলছে।
মৌলবাদীরা তাঁর উপর ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে । রাজপথ থেকে একসময় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংসদে। মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। মিথ্যা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলা হয়,
এই বইয়ে আল্লাহ, রাসুল (সাঃ), তার সমধর্মিনীদেরসহ জান্নাত-জাহান্নাম ও মুজাহিদীনদের নিয়ে ঠাট্টা, বিদ্রূপ, চরম অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে বইটিতে !
বইটির কিঞ্চিৎ অংশ -
''দেশ মুরতাদ ও ইহুদিতে ভ’রে গেছে, দেশ নাপাক হয়ে গেছে, একে আবার পাক করে তুলতে হবে। পাক পবিত্র স্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্থান নেই ব’লে আমাদের দিলে শান্তি নেই; আমরা সব সময় স্তানের স্বপ্ন দেখি; স্তান থেকে খেজুর, বাশমতি চাউল এনে খাই, তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলি, আমাদের লকলকে যুবতীগুলো তাদের দাড়িঅলা দাড়িছাড়া খেলোয়াড়দের চুমো খাওয়ার, দেহ দেয়ার জন্যে পাগল হয়, তাদের হোটলে গিয়ে চিৎ হয়।
তাদের দুই চারটি মেজর-লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসে মাসে ছফরে না এলে আমরা দিলে সুখ পাই না।এভাবে আমরা একটু পাকের পরশ পাই। নাপাক ওয়াতানে বাস করা শুয়োরের গোস্ত খাওয়ার থেকেও হারাম। নাউজুবিল্লা। আমরা একলা নই; আমাদের ভাইয়েরা আছে দুনিয়া জুড়ে, তাদের কাজ ক’রে চলেছে; কোথাও যদি কোন দালানের ওপর এরোপ্লেন ঝাঁপিয়ে পরে। যদি কোন গাড়ি হাসপাতালে হোটেলে ঢুকে সব কিছু চুরমাচুর ক’রে দেয়, যদি কোন প্রমোদকেন্দ্রে বোমায় ৩০০ জন মরে, তখন বুঝি সেটা আমাদের ভাইদের কাজ। এক অর্থে আমাদেরই কাজ। এটা জিহাদ। আমরা আমাদের কাজ ক’রে চলেছি; দেশ এক রকম দখলই করে ফেলেছি, পুরোপুরি করতে বাকি নেই''।
উল্লেখ্য যে, হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে “ধর্ম অবমাননার দায়ে” খুন হওয়া ব্যক্তিরা সবাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি ও ধর্ম ব্যবসার ঘোর-বিরোধী ছিলেন, বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন । সাধারণ মুসলমানদের সহমর্মীতা পাওয়ার জন্য এদের সম্পর্কে অনেক অসত্য তুলে ধরা হয় । এবং তারা তাতে সফল ই একরকম।
একই সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে জমিয়াতুল মুজাহিদিনের জঙ্গিদের দ্বারা যে সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হন তিনি, নৃশংসভাবে তার ঘরে কাঁধে গলায় কোপানো হয়।
ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন।
তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেখতে সিএম এইচ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে তৎকালীন প্রশাসন তার গাড়ি আটকে দেয়, গাড়ি থেকে নেমে দুই মাইল হেটে গিয়ে অধ্যাপক হুমায়ন আজাদকে দেখে এসেছিলেন শেখ হাসিনা ।
১৩ বছরেও শেষ হয়নি প্রথাবিরোধী লেখক,গবেষক, দার্শনিক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার। জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছে না। এ কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষীর অভাব কিংবা বিচারক ছুটিতে এমন নানা অজুহাতে এক যুগ পরেও দেশের এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার থমকে আছে। জার্মানিতে তাঁর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিলো তাও রহস্যাবৃত।
‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসের লেখকের ওপর হামলায় কারা ইন্ধন দিয়েছিলো, এমন জবাব নিজেই দিয়েছিলেন চাপাতি-কুড়ালের আঘাতে মারাত্মক জখমে ক্ষতবিক্ষত হলেন হুমায়ুন আজাদ। হামলার দীর্ঘ ২৪ দিন পর তাঁর জ্ঞান ফিরলে আক্রমণকারীদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তৎকালীন সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেই ( বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশে কারান্তরীণ) প্রশ্ন করতে বলেছিলেন।
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৩) বইটিকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে এক লম্বা বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২৩ মার্চ জ্ঞান ফিরলে ড. আজাদ এক সংবাদ সম্মেলনে দুটি সংবাদ পত্র ও সাঈদীকে তাঁর ওপর হামলার জন্য দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যেভাবে দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক সংগ্রাম আমার বিরুদ্ধে লিখছিল এবং সাঈদী সংসদে আমার বিরুদ্ধে যা বলেছেন তা এই হামলার সঙ্গে তাদের সংযোগের ইঙ্গিত দেয়। জানিনা রাষ্ট্র এ বিষয়ে সংগ্রাম, ইনকিলাব বা সাঈদীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন’।
বিদেশে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ কিছুটা সুস্থ হন। এই সময় অভিজিৎ রায়ের সাথে তার কথা হয় ( যে অভিজিৎ রায়কেও আরো কয়েক বছর পরে ধর্মান্ধ জঙ্গিদের চাপাতিতে দেশে বেড়াতে এসে জীবন দিতে হয়েছিল) !
অভিজিতের জবানিতেই তুলে ধরা যাক - ''৩০শে জুলাই ২০০৪ তারিখে । এই প্রথমবার তার সাথে কথা (কিন্তু তখন কি জানতাম সে টাই হবে শেষ কথাও?)। মিনিট দশেকের কথোপকথোনে উঠে এসেছিল ধর্ম, রাজনীতি সমাজ নিয়ে নানা চালচিত্র। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কোন অ্যাসাইলামের কথা ভাবছেন কিনা। সে রকম হলে আমরা মুক্তমনার পক্ষ থেকে চেষ্টা করে দেখতে পারি।
অধ্যাপক আজাদ স্পষ্ট করে বললেন যে তিনি বাংলাদেশে থেকেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। কোন ধরণের অ্যাসাইলামের কথা তিনি ভাবছেন না। বললেন, রিসার্চের কাজে এক বছরের জন্য জার্মানী যাচ্ছেন। তারপর আবার ফিরবেন। বললেন ‘জার্মানী গিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করব ।’ কিন্তু সে যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হল।
আমাকে অনন্ত প্রহেলিকার মধ্যে রেখে হারিয়ে গেলেন হুমায়ুন আজাদ। আমি ১৪ কিংবা ১৫ তারিখে তার মৃত্যুর খবর পাই। হতবিহবল অবস্থায় লিখলাম – এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়, তেমন যোগ্য সমাধি কই?
জার্মান সরকার তাকে গবেষণা বৃত্তি প্রদান করে। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, আলোচিত এই মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলায় ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৩৮ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী দুই ডাক্তারসহ ২০ জন বাকী রয়েছেন। তারা সাক্ষ্য দিলেই মামলার কার্যক্রম শেষ করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
পরে জার্মানির মিউনিখে একই বছরের ১২ আগস্ট তাকে তার ফ্ল্যাটে মৃত পাওয়া যায় । অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের লাশ দীর্ঘদিন জার্মানির মিউনিখে একটি মরচুয়ারিতে পড়ে ছিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের মরদেহ ফেরত আনার জন্য তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিক্ষক সমিতি ও পরিবারের ব্যবস্থাপনায় তাঁর লাশ ফেরত আনা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন, জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এদের মধ্যে আসামি নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক।
তার লেখা দিয়েই শুরু তাকে দিয়েই শেষ করছি, কিংবা সেই বিখ্যাত চুম্বকাংশ ''“আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে/নষ্টদের দানব মুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক সব সংঘ পরিষদ”!
অর্থাৎ স্যার হয় এটা হবে নাহলে ওটা হবে, একটা কিছু হবে কিন্তু কোনটা হবে স্যার ?
EmoticonEmoticon