মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮

ভাবনার মৃত্যু নেই ।

হেমলক খাইয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছিল মহান সক্রেটিসকে । কোরবানির দিন জনসম্মুখে জবাই করা হয়েছিল কবি যিরহামকে। যিনি শুধু কিছু প্রশ্ন করেছিলেন মাত্র।
প্লেতো এরিস্টোটলকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
ইবনে খালদুন, আল মা আরীকে নির্যাতন করা হয়েছিল।
ব্রুনোকে খুন করা হয়েছিল আগুনে পুড়িয়ে। ফ্রেদারিক দ্য গ্রেট এবং ইবনে রুশদকে খোদ ইউরোপে দুই দুইবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল 'তিন ভন্ড ' গ্রন্থের রচয়িতা সন্দেহে।
গ্যালিলিও, একুইনাস, পিথাগোরাসের কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
এই রকম লক্ষ লক্ষ মহান শিক্ষাগুরু আর মুক্তচিন্তকদের নির্যাতিত, হত, আহত এবং দেশান্তরিত করা হয়েছিল এবং এখনো করা হচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে।
এই উপমহাদেশে শিক্ষকদের আদর্শ  মহান শিক্ষক ডিরোজিওকে অপদস্হ করে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছিল।
এটা সত্যি, শিক্ষকের উপর এই প্রতিবন্ধী সমাজের আক্রমণ নতুন কোন বিষয় নয়।

কিন্তু বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
একাত্তরে হাজার হাজার মুক্তচিন্তাবিদদের হত্যা করে আমাদেরকে চিন্তার রাজ্যে কাপুরুষ বানিয়ে রাখা হয়েছে। তারপর সেই অন্ধকার ভেদকরে যারাই স্বাধীনভাবে ভাবতে চেয়েছে, তাদেরই কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে একের পর এক আলোকিত মানুষদের খুন করা হচ্ছে।  একাত্তরেও ঠিক একই নৃশংসতায় লিস্ট করে করে খুন করা হয়েছিল অসংখ্য মহান মানুষদের।
এটা কি পৃথিবীর আর কোথায় এত ব্যাপকভাবে ঘটেছে? মোটেও না।
খুন করা হয়েছে সত্যভাষী স্যার হুমায়ুন আজাদকে, সংগ্রামী নিলয় নীলকে, প্রতিভাবান ওয়াশিকুর বাবুকে, পরিশ্রমী অভিজিৎ রায়কে, অগ্নিপুরুষ রাজিব হায়দারকে এবং আরও অনেক আলোকিত মানুষদের।
বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে! 
একটা মুক্তচিন্তার মানুষ খুন হলে যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে রাষ্ট্র নির্বিকার।

আবার খুন করা হয়েছে একজন আলোকিত মানুষকে। আমাদের সবার প্রিয় শাহজাহান বাচ্চুকে!
আল্লাহকে জীবিত রাখতে মানু‌ষের রক্ত প্রয়োজন হয়।

আসলে এই বাংলাদেশের কর্নধার জনগণ নয়, নয় তাদের কোন বৈধ প্রতিনিধি। এই দেশ শাসন করছে মূলত কিছু মাসলম্যান ।যারা ক্ষমতার মোহেই মুক্তচিন্তার উপর আঘাতে উৎসাহী।আর জ্ঞান বিতরণকারীকে হেয় করতে হবে, খুন করতে হবে, নির্যাতন ও বিতাড়ন করতে হবে এটাই কি এই প্রতিবন্ধী দেশের সাধারণ রীতি?
ক্ষমতার মোহ, একাত্তরের ক্ষতি, ধর্ম, পুঁজি, উচ্চাকাঙক্ষার ইতরামি আমাদের বিবেকবোধ ধ্বংস করে ফেলেছে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ আরো একটা বিশ্বরেকর্ড করেছে। জ্ঞান বিতরণের অপরাধে শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর রেকর্ড।
হায়রে ঘাসভক্ষণকারীদের দেশ,
এর চেয়ে শিক্ষকটাকে মেরে ফেলতি, সেটাই বরং সম্মানজনক হতো। মৃত্যুর মিছিলে না হয় আরো একটা নাম যুক্ত হতো। এই তো!
চাপাতি তো উৎপাদিত হচ্ছেই, ঘরে ঘরে। এবং সেটা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে।

রাষ্ট্র নিজেই এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্র্যাকটিস করছে। নির্বিচারে খুন করছে তথাকথিত সংযমের মাসেও। যে রমজান মাসে রক্তপাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে খোদ যুদ্ধের ধর্ম ইসলাম। 
হায়! আমাদের রাষ্ট্রের ধর্মও নাকি আবার কবন্ধ ইসলাম!

বিচার চাই না। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি এই সরকারকে।
কলম চলবেই।
ভাবনার মৃত্যু নেই।
অক্ষর চিরকালই দূর্বার মতো দুর্বার।


EmoticonEmoticon