সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮

কৃষ্ণ চক্রবর্তীর অপসারণে জানা অজানা নানা কথা (পর্ব-২)

আবার উচ্চকিত গুঞ্জন।
এসইউসি আই এর আরও এক কেন্দ্রীয় কমিটি ও এক পলিটব্যুরো সদস্য নাকি ইতিমধ্যে তাদের অধঃপতন প্রক্রিয়া নিশ্চিত  করে ফেলেছেন। অর্থাৎ তালিকা আবারও সংযোজিত হবার অপেক্ষায়।অন্তত, সেরকমই শোনা যাচ্ছে।
                    হ্যাঁ, উত্তরপ্রদেশের তিন জনের নাম পেলাম। ওই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত( সম্ভবত)  বরিষ্ঠ নেতা কে ডি শর্মা, বিনোদ শর্মা, মুকেশ ত্যাগীরা অধঃপতিতদের অন্যতম। মুকেশ ত্যাগী ওই রাজ্যের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক ও দলের রাজ্য কমিটি সদস্যও ছিলেন। প্রাণবন্ত,  জ্ঞান- উন্মুখ তরতাজা  যুবক। এঁরাওঅধঃপতিত হলেন।
মনে পড়লো- উত্তরপ্রদেশের বালিয়া ও অন্য জায়গার বিনোদ মিশ্র সহ অন্যান্য অধঃপতিতদের নাম।
  আমার কাছে অধঃপতন বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারটা এখন প্রত্যাশিত।
প্রশ্ন অন্য জায়গায়।
কোন আদর্শদলে কি বহিষ্কার,  অধঃপতন ঘটা অস্বাভাবিক?Bikashদা যেমন চিন সোভিয়েতে পার্জিং এর কথা বলছিলেন।  আমার তা একেবারেই মনে হয়না।
যেহেতু সিস্টেমটা ওপেন, দল আর দেশ- সমাজ এক নয়, তাই বাইরের ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার অভিঘাত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করবে, কোনক্ষেত্রে  তা দলের প্রভাবকে ছাপিয়ে ব্যক্তিকে
গ্রাস করতে পারে। ফলে অধঃপতন, অবনমন ঘটতে পারে।
কিন্তু যদি দেখা যায়,  একের পর এক অধঃপতন বা বহিষ্কার  ঘটেই চলেছে তাহলে বিষয়টা অন্যভাবে ভাবতেই হবে।
এক, দলে আদর্শগত বিকৃতি রয়েছে,  ফলে নৈতিক বিচ্যুতি নেতৃত্বে সাধারণীকৃত হয়েছে। বহিষ্কার নেহাতই পছন্দ- অপছন্দ, গোষ্ঠীবাজির ফল হতে পারে। উভয়পক্ষই নীতিহীন।
  দুই, অবক্ষয়িত নেতৃত্ব ও যারা তখনো পুরোপুরি অবক্ষয়ের শিকার হননি তাদের দ্বন্দ্বের পরিণতি। সেক্ষেত্রে অফিসিয়াল নেতৃত্বের কাছে পরাভূত হয়ে ' অধঃপতিত',  বহিষ্কৃত হয়ে বাদ পড়েন বিরুদ্ধপক্ষের লোকেরা।
   তৃতীয়, বহিঃশত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি দলের মধ্যে অনেক উটকো লোক ঢুকিয়ে দিচ্ছে, দিয়েছে। দল এত জনভিত্তি অর্জন করেছে বা সদ্য বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে,  এত সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে, যে সেসব লোকেদের স্ক্রিনিং, শেপিং এর উপযুক্ত নেতৃমন্ডলী নেই।
    চার, দলে অন্তর্ঘাত,  প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্র চরম ক্ষতি করে ফেলছে। বিরুদ্ধ শক্তি দলের ভেতরে দলে দলে লোক ঢুকিয়ে অন্তর্ঘাত ঘটাতে চাইছে, তখন  হয়তো শুদ্ধিকরণ, পার্জিং প্রয়োজন হতে পারে।
শংকর সিং, ফটিক ঘোষ, জ্ঞান সিং, জেমস জোসেফ,  হারণে, শ্যামসুন্দর, ড:প্রসাদ, চিত্ত বেহেরা,  মায়াধর নায়েক, এন আর সিং, বিপিন মাহাতো এনারা প্রতিবিপ্লবী শক্তির প্লান্টেড এলিমেন্ট!!  অনিল সেন, সুকোমল দাসগুপ্ত  অত্যন্ত বয়সকালে এসে ব্যক্তিস্বার্থের কাছে মাথা নোয়ালেন? দল কোনভাবেই আটকাতে পারল না?
   সময় এর জবাব ভালোভাবেই নেবে।
সাধারণ মানবতাবাদী দৃষ্টিতেও দলে মতবিরোধ, কলহকে যথেষ্ট উদারভাবে দেখা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন,  প্রকাশ্যে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের সুযোগ দেওয়া হয়। অপূর্ব বিশ্বাসঘাতকতা করে দলের চরম বিপদ ডেকে আনলেও সব্যসাচী তাকে ক্ষমা করেছেন। এখানে সেসব কেউ ভাবতেও পারেননা।
     যে দল এদের ধরে রাখতে পারল না  তার কক্ষ এত সংকীর্ণ, সে বিশ্বমানবতাকে ধারণ করবে কি করে?  বিপ্লবী দল শুধু বিপ্লব করেনা,
সে তো নতুন মানবসমাজ তৈরি করে। সুন্দর সুন্দর মানুষ দলে ঢুকিয়ে পচে গেছে বলে ঝেড়ে ফেলতে সহজে পারে? যারা জীবন যৌবনের মূল্যবান অংশ দলেই দিলেন, তাদের কেন আর জায়গা হবেনা সেকথা একবারও ভাববেন না।
   যাই বলুন না কেন, অচলায়তনের মতই বড় একমাত্রিক,  বৈচিত্র্য -ভীত এই দল। বৈচিত্রের সৌন্দর্যকে বরণ করার শিক্ষা এ দলের নেই। সকলকেই এক ছাঁচে ফেলতে না পারলে বোধহয় অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। চলা, ফেরা, আবেগময়তা, জীবনযাত্রা এক না করে ফেলতে পারলে এনারা অচলায়তনের মতো বিপন্নতায় ভোগেন।
     ওয়াননেস, সিংগলনেস, ইউনিফর্মিটি  নামে তাই যন্ত্রসম মানুষ তৈরি হচ্ছে না তো?
  তাই যাঁদের দুদিন আগেও নেতা বলে মানে শ্রদ্ধা করে নিজেরা তার কিছু  বিচ্যুতি নিজে না জানলেও, না দেখলেও দল থেকে সরিয়ে দিলে তাদের মাথায় প্রশ্ন আসেনা?
     এ কিসের লক্ষণ?  এ যদি মুক্ত চিন্তা প্রক্রিয়াকে ধ্বংস  করে, মানসিক ভারসাম্যহীন করে তা কি কিছু অস্বাভাবিক????
  আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আমার প্রশ্ন রাখলাম।
   আপনারা  কি ভাবছেন?


EmoticonEmoticon