রক্ষীবাহিনী যখন গঠন করা হয় তখন যুক্তি দেখানো হয়েছিল যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের কাজে লাগানোর। কিন্তু গঠনের পরে ফল হল উলটো। রক্ষীবাহিনী হয়ে উঠলো একটি খুনি বাহিনী। বিনাবিচারে হত্যার চর্চা এই রক্ষীবাহিনী শুরু করে। প্রথমে বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে ধরে বিনাবিচারে খুন করতো রক্ষীবাহিনী। প্রথমে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের খুন করে হাত লাল করে রক্ষীবাহিনী তারপর অন্যান্য বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে ধরে খুন করে রক্ষীবাহিনী। তখন বিরোধী দল হিসেবে জাসদ আত্মপ্রকাশ করে। জাসদের কর্মীদের ধরে ধরে খুন করা শুরু করে রক্ষীবাহিনী। জাসদ উপায়ান্তর না দেখে গণবাহিনী নামে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বাহিনী গড়ে তোলে। এই গণবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় রক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
তাই বিনাবিচারে হত্যার সংস্কৃতি এইরাষ্ট্রের জন্ম থেকেই। ফলে রাষ্ট্রটি খুনোখুনির চর্চা করেই এগিয়েছে। একশাসককে আরেক শাসক খুন করে ক্ষমতা দখল করেছে। অথবা প্রহসনের বিচারের নামে রাষ্ট্রীয় খুনের খাতায় নাম যোগ হতেই চলেছে। এখানে আইন আছে, সংবিধান আছে, আছে খুনের বৈধতা। খুনোখুনি ছাড়া ক্ষমতা চলে না। যার প্রভাব সমাজের উপর পড়েছে। ফলে একটি মানবিক সমাজের বদলে একটি খুনি সমাজ হয়ে উঠেছে। এখানে খুনকে সমর্থনকারীর সংখ্যা কম নয়। শিক্ষিত ভদ্রলোক নিজের স্বার্থে খুনকে সমর্থন করেন।
দিনে দিনে বিনাবিচারে খুনের সংখ্যা বেড়েছে। মাওবাদীদের বিনাবিচারে খুনের সমর্থন কম বেশি সব ভদ্রলোক দিয়ে গেছেন। সবাই মনে মনে খুশি হয়েছে, ‘যাক আর বোধয় খুনোখুনি হবে না'। না খুন থেকে এই রাষ্ট্র কখনো বের হতে পারেনি। বিএনপি ২০০২ সালে সন্ত্রাস নির্মুলের নামে সেনাবাহিনী দিয়ে বিনাবিচারে খুনের চর্চা করে। বিনাবিচারে যখন ৫৮ (স্মৃতি থেকে কমবেশি হতে পারে) জনকে সেনাবাহিনী হত্যা করে তখন তাদের দায়মুক্তি দিয়ে একটি আধা সামরিক খুনি বাহিনীর জন্ম দেয়। প্রথমে কোবরা, র্যাট, বিভিন্ন নাম দিয়ে পরে শেষে নামকরণ হয় র্যাব বা র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন। এর র্যাব শুরুতে সন্ত্রাস বিরোধী কার্যকম শুরু করে জনপ্রিয়তা পেলেও দেখা গেল আচিরেই একটি খুনি বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একের পর এক বিনাবিচারে হত্যা করে র্যাব হাত লাল করেছে। র্যাব হ্যবহৃত হয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে, ভাড়াটে খুনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে র্যাব ব্যবহৃত হয়েছে। র্যাব ক্রসফায়ার এর নামে, বন্দুক যুদ্ধের নামে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। কোনদিন শুনি নাই বন্দুক যুদ্ধে র্যাব নিহত হয়েছে। একতরফা খুন করেও তা বন্দুকযুদ্ধ?
বিএনপি গত নয় বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে র্যাব গঠন তাদের কত ভুল ছিল? বিএনপি এখন র্যাবের বিলুপ্তি চায়।
আমি এখন ভাবছি। বাই চান্স আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আর থাকতে পারলো না। তখন তাদের নেতা কর্মীদের একই বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে না? এটা অলীক কল্পনা যে সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। একদিন ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তখন কল্পনা করুন আপনার অবস্থা? যে চর্চা শুরু করেছেন তা মোটেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ভাল কিছু নয়। এটা নিজের জন্য খূপ খনন করছেন। আচিরেই যদি এইসব খুনোখুনির চর্চা, বিনাবিচারে হত্যা থেকে বের হয়ে না আসেন। তবে আপনার জন্য এরকম সময় অপেক্ষা করছে। খুনোখুনির রাজনীতি ভাল কিছু উপহার দেয়নি। ভবিষ্যতেও দিবে না। র্যাব পুলিশ সহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাজকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে এদের শাস্তির বিধান থাকতে হবে। তা যদি না হয় এই খুনোখুনির রাজনীতি থেকে এই জাতি বেরিয়ে আসতে পারবে না।
EmoticonEmoticon