অভিজ্ঞতার ভান্ডারে নতুন সংযোজন হলো গতরাতে । বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়ার নব নিযুক্ত রাস্ট্রদুতের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী সমিতি । অনুষ্ঠান শেষে কম্যুনিষ্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক কমরেড শাহ আলম সহ পল্টনে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। শাহ আলম ভাইকে বললাম , চলেন , শাহবাগ থেকে বাসে করে পল্টন পল্টন যাই । উনি বললেন , না, চলেন রিক্সায় যাই । ইন্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট এলাকায় সব সময় ছিনতাই হয় বলে সাধারণত রাতে এই এলাকা দিয়ে রিক্সায় যাতায়াত করি না । কিন্তু ভাবলাম , মোটে রাত সাড়ে আটটা বাজে , কি আর হবে ! রিক্সা নিয়ে শিশু পার্ক পেরিয়ে এলাম, ইন্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের গেট পার হলাম । মোটামুটি স্বস্তি তৈরী হলো । ঐ তো সামনে মৎস্য ভবন । তাহলে , নিরাপদে চলেই এলাম । এসব ভাবছি আবার দু’জনে কথাও বলছি । রিক্সাটা যখন রমনা রেঁস্তোরার গেটের সামনে, তখন এক ৩৫/৩৬ বছর বয়সী ভাল স্বাস্থ্যের যুবক টলতে টলতে এসে রিক্সার সামনে এসে দাড়াল । সে রিক্সার হ্যান্ডেল ধরে রিক্সা থামিয়ে রিক্সা চালককে গালিগালাজ শুরু করে দিল। আমরা বললাম আপনার গায়ে কি লেগেছে ? লাগেনি তো । তাহলে ছেড়ে দেন রিক্সা চালককে । রিক্সা তো ছেড়ে দিলই না বরং সে রিক্সার চাকার সামনে পা টা বাঁকা করে দিল যাতে রিক্সা আর এগুতে না পারে । যুবকের মুখ থেকে মদের গন্ধ বেরুচ্ছিল আর সে উত্তেজিত হবার ভান করে আর বলছিল , আপনারা যাত্রী, আপনারা চুপ থাকেন। ইতি মধ্যে সামনের রিক্সা থেকে দু’জন নেমে এলো। তাদের একজন আবার মুখে মাক্স পরা । পিছনে তাকিয়ে দেখি আরও দু’জন দাড়িয়ে আছে। পাঁচজনে রিক্সাটা ঘিরে ধরছে । আমি মনে মনে ভাবছি, এবার আর উপায় নেই। একটু সময় নেবার আশায় আমি বললাম , জানেন ইনি কে ? ইনি কম্যুনিষ্ট পার্টির সেক্রেটারী । ওরা বললো, তো কি হয়েছে । কথা বলছে আর ক্রমাগত কাছে এগিয়ে আসছিল ওরা । একজন বললো, আমাদের কাছে খবর আছে যে, “আপনাদের কাছে ২ লাখ টাকা আছে । এখন বলেন, টাকা বড় না জীবন বড় ?” আমি আশে পাশে তাকাচ্ছি , সাহায্যের আশায়। কেউ থামছে না । কথা বলে সময় নেয়ার চেষ্টা করছি এই আশায়, যদি পরিচিত কাউকে পাই । ওরা বলছে , থানায় গিয়ে লাভ হবে না কোন। আমাদেরকে একটু একটু করে রমনা রেঁস্তোরার গলিতে ঢোকানোর ইচ্ছে আছে ওদের , এটা বুঝতে পারছি আর চেষ্টা করছি গায়ের একেবারে কাছে যেন আসতে না পারে।
ওদের আচরণ এবং কথা বার্তায় বুঝা যাচ্ছিল যে, ওরা সাধারন ছিনতাইকারী নয় । কারন মোবাইল বা মানিব্যাগের দিকে নজর নেই । সম্ভবত আটকে রেখে টাকা আদায় করা অথবা অন্য কিছু করা ছিল ওদের উদ্দেশ্য।
পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল অনেক রিক্সা, গাড়ি । কিন্তু কেউ দাড়াচ্ছিল না ।
দু’এক জন পরিচিত চেহারার মানুষ দেখে একটু জোরে জোরে কথা বলতে থাকলাম । আর ওরা ক্রমাগত গায়ের কাছ ঘেষে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করছিল বার বার।
এমন সময় কি হলো বুঝতে পারলাম না । ওরা বললো, আচ্ছা যান ! আমরা আপনাদের সাথে তো কোন খারাপ ব্যবহার করিনি । মনে মনে বললাম, যা করেছো তাতেই যথেষ্ট । এবার বাঁচতে পারলে হয় ।
রিক্সাকে বললাম , বাবা, চলো ! হাঁপ ছেড়ে বাচলাম । কিন্তু চিন্তা তো পিছু ছাড়ছে না ।
শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮
বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা । এরা তো সাধারন ছিনতাইকারী নয় , তাহলে কারা ?

Artikel Terkait
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
EmoticonEmoticon