আরে কীয়ের গ্যাড? বুঝবার পারলামনা একটু খোলসা করো।
গ্যাড হইলো জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট, এরা নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে কাজ করে।
শোনো তাহলে; গণনাটকে নতুন টেকনোলজি যোগ হয়, ইমপ্রোভাইজেশন কোরিওগ্রাফি। বেশ কিছু নারী পারফরমার নিয়োগ দেয়া হয়। কোলকাতা থেকে একজন কোরিওগ্রাফারও আনা হয়। তবে ইমরোজ ভাই মানে আমাদের ইডি, নিজেই কোরিওগ্রাফির প্রশিক্ষন দিতে শুরু করেন। উনি বোঝেন কোরিওগ্রাফির ঘোড়ার আন্ডা। ভাল বাংলাই বলতে পারেনা। তিনি আবার মডার্ণ ডান্স নিয়ে মুখস্ত লেকচার ঝাড়েন।
তোমার ইডিতো ভালই মুখস্ত বিদ্যাধরি।
এই কষ্টেও সে একটু স্মিত হেসে বলে, বিদ্যাধরি না ছাই। নাচে কোরিওগ্রাফির ব্যাবহার মূলতঃ ডান্স কমপোজিশনে। ইমরোজ সাহেব করেন কী, প্রশিক্ষণ কালে নিজেই কোওিগ্রাফি শেখানোর ছলে মেয়েদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে প্রকাশ্যে হাত দেন। বস্তির অল্প শিক্ষিত তরুনী ও গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের চাকরি দিয়ে, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেন, সাথে ঐ জেন্ডার বিশেজ্ঞও। আমাকেও কয়েকবার তাদের নিগ্রহের মোকাবেলা করতে হয়।
ওর বাড়ি টাঙ্গাইল কুনহানে?
শুনেছি গোপালপুরের দিকে।
ওর কুনো ফডু দেখাইবা পারো?
মোবাইলে আছে।
ঐ হালার পুতরেতো আমি চিনি। আমাগো লগে কিছু দিন নাটকে আছাল। এই চেয়ার বেঞ্চ ঝাঢ়পুছ, মাঝে মাঝে সাইড সুইডের পাঠ করতো। তারপর ও তো ময়মনসিং ভালুকার দিক যাইয়া পোনার ব্যাবসা শুরু করে। হুনছি যে ও ঢাহায় যাইয়া এহন এনজিও ব্যাবসা করতাছে। ওর নামতো আছাল ছহিলুদ্দি; ইমরেজ হাসান হইলো ক্যামনে? ও হালায়তো এসএসসি পাশ দিতেও পারে নাই। দ্যাশে হইলোডা কী। তা তুমি ঐহানে ভিড়লা ক্যান?
আমি কী এত সব জানতাম। শোনো তাহলে; সেদিন সন্ধ্যায় বেইলী রোডে বসে আড্ডা মারছি। আমার মোবাইল বেজে ওঠে; ইডির নাম্বার মোবাইল স্ক্রিনে দেখছি। উনি বললেন জরুরি কাজ, তুমি আজিজ মার্কেটে পাঠক সমাবেশের পাশে শ্রাবনীতে আসো। আমি সিএনজি নিয়ে চলে এলাম। এসেই দেখি, পাঠক সমাবেশের গলিতে দাড়িয়ে গ্যাড বিশেষজ্ঞ তারেক হাসান সাহেব। হাত মুঠো করে তার বিশেষ ভঙ্গিমায় সিগারেট টানছেন।
আমাকে দেখেই মুচকি হেসে, তার মর্দা হাসের মত ফ্যাসফেসে গলায় বললেন, আরে ম্যাডাম তোমাকে খুজেই পায়া যায়না, তুমিতো এখন খুব ব্যস্ত।
প্রতুত্তোর না দিয়ে বলি, ইমরেজভাই রিং দিলেন উনি কোথায়?
ইমরোজ আছে। একথা বলে উনি আলতো করে পিঠে হাত দিয়ে বলেন, চলো সামনে এগোই।
বলা মাত্রই ষ্টার্টেড টু ওয়াক উইথ হিম।
ঝাঝঁ মাখা স্বরে মালতী বলে, হ্যাঁ চললাম তোমার মতো সোনার চামচ মুখে দিয়েতো জন্মাইনি। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠেছি, বাবা মৃত্যূ শয্যায়, ছোটভাই ময়মনসিং মেডিকেলে পড়ে, একমাত্র আমিই উপার্জনক্ষম। ঐ গ্যাড বিশেষজ্ঞ ব্যাডা কিয়ের কাম করে। সে ঢাকার সিভিল সোসাইটির বড় একজন নেতা। উন্নয়ন ও জেন্ডারের উপর বাংলা ও ইংরেজিতে তার লেখা কয়েকটি বই আছে। তবে তার বড় পরিচয় ডোনারদের সাথে তার হট কানেকশন আর সরকারি মহলে তাঁর ভাল যোগাযোগ। উচ্চশিক্ষিত, শুনেছি বিদেশী একখান ডিগ্রিও নাকি তাঁর আছে।
ঠিক আছে তারপরের ঘটনা বলি, ইমরোজ সাহেব ধারে কাছেই ছিলেন।
আমি একটু উচ্চস্বরে বলি, আরে ঐ ছলিহুদ্দিরে ইমরোজ সাহেব কইতাছো?
মালতী একটু হকচকিয়ে যায়, তা আমি কী বলবো।
ছহিলুদ্দি কইবা।
ঠিক আছে। ছহিলুদ্দি ঝড়ের বেগে বলেন, চলো নীচে যেয়ে গাড়িতে উঠে পড়ো, আমরা কিছু খেতে যাই। দুপুরে লাঞ্চ করার সময় পাইনি। খেতে খেতে তোমাকে কিছু দরকারি কথা কমু।
ও হালায় গাড়ি বাগাইছু?
ডোনারদের ফান্ডে খানদুই গাড়ি কিনেছে।
সারা আকাশ মেঘে ঢাকা, টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরছে। আমরা একটু দৌড়ে গাড়িতে উঠি। অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দের ভিতর দিয়ে উঠি। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসি। তাঁরা চাপাচাপি করছিলো, পিছনের সিটে তাদের পাশে বসতে। গাড়িতে কোন কথা হয়না, গাড়ি সাইন্স ল্যাবরটরির কাছে এসে থামে। আমরা হেটে হেটে মালঞ্চ রেস্তোরাঁয় চলে আসি। ভিতরে ঢুকে একটি খালি টেবিলে বসি।
তারেক সাহেব বলেন, আরে সুন্দরী কী খাবে বলো। আমি বলি, বিকেলে অনেক নাস্তা করেছি এখন কিছু খাবনা।
তাই কী হয়, আমরা রাতের ডিনার এখানেই সেরে ফেলি। বলো তুমি কী পছন্দ করো।
অগত্যা তাদের চাপাচাপিতে বলেই ফেললাম, পরাটা আর মাটন কারি। ইমরোজ ভাই বললেন।
আবার ইমরোজ। আর কীয়ের ভাই ঐ লম্পট হালায়।
সরি, চাকরি করে এতেই অভ্যস্ত হয়েছি।
ঠিক আছে কইতে থাকো।
ছহিলুদ্দি বললো, তুমি পেশোয়ারি পরাটা, মাটন রেজালা আর চিকেন ফ্রাই নাও। আমরা সাদা পোলাও, চিকেন কারি ও ইলিশ ফ্রাই নি।
মেনুর বর্ণনা শুনে উত্তেজিত ভাবে আমি বলে উঠি, আর তুমি ঐ বাস্টার্ডগো লগে বইয়া গপাগপ খাইত্যা শুরু করলা।
আমি অসহায় মেয়ে, ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়েছি রুবেল ভাই তুমিতো সব শুনবা।
ওকে কইতে থাকো।
খেতে খেতে আমার ডিরেক্টর বলে--- এবার ও ফুঁপিয়ে উঠে শাড়ীর আচলে চোখ মুখ ঢেকে ফেলে। উঠে দাড়িয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে, আমি আসছি।
আবারও দ্রুতপদে ভিতরে চলে গেলো। আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। ঘটনা কতদুর গড়িয়েছে, ওকি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে না এইসব লোফার, হায়নাদের ফাঁদে পড়েছে। কিছু পরে মালতী আবার ধীর পায়ে ফিরে আসে, হাতে এককাপ ধুমায়িত চা। তার মুখে সদ্য দেওয়া জলের ঝাপটার রেশ প্রতিভাত।
তোমার জন্য গরম চা নিয়ে এলাম। তুমি ঠান্ডা চা চুমুক দিচ্ছিলে, আমার
খারাপ লাগছিলো।
আমি খুব বিস্মিত হলাম, এই পরিস্থিতিতে ও কীভাবে এগুলি করছে। আমি ওর দিকে তাকালাম ওর জেদি, ব্যথাতুর মুখচ্ছবি দেখে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। আমি বললাম ক্যান তুমি আবার চা আনতে গ্যালা।
তুমি ঠান্ডা চা খাচ্ছিলে। আমাদের আড্ডায় তোমার চা একটু কম গরম হলে, তুমি কি কান্ডই না করতে।
আমি চা খাচ্ছি ও নিশ্চুপ আমি বেশ উৎকন্ঠায় আছি, মালতীতো আর কিছু বলছে না। কী ঘটেছে, জানবার জন্য ব্যাকুল। আমি আবার চোখ তুলে ওর দিকে তাকালাম।
ও আবার বলতে শুরু করে, ইডি সাহেব কোন ভণিতা না করেই তারেক সাহেবের সামনেই বলেন, থিয়েটার প্রোগ্রামে আমাদের ফান্ড ক্রাইসিস হয়,
তারেক ভাই আমাদের কাণ্ডারি হয়ে আগাইয়া আসেন। ইউ এস এইড, জোভিব থেকে তিনিই আমাদের বড় ফান্ড যোগাড় কইরা দেন, তুমিতো জানো তাঁর বিষয়ে। তোমার পারফরমিন্স ও সাংগঠনিক কার্যক্রম দেইখ্যা
উনি তোমার ব্যাপারে খুবই ইমপ্রিস। ওনার প্রস্তাবণায় আমরা সিদ্ধান্ত নেছি তোমাকে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে প্রুমুশন দিবার।
আমি মনে মনে কিছুটা পুলকিত হলাম, তবুও বললাম আমার অভিজ্ঞতা কম, লেখাপড়াও সিম্পল গ্রাজুয়েট। এতবড় দায়িত্ব পালন করতে কী পারবো?
এবার তারেক সাহেব তার ফ্যাসফেসে গলায়, কুতকুতে চোখে তাকিয়ে, তার বা হাত টেবিলের নীচ দিয়ে আমার উরুতে একটু চাপ দিয়ে হেসে বলেন, আরে সুন্দরী কেন পারবেনা, ইউ আর আ প্রেটি এন্ড জিনিয়াস । তোমার ভিতর সুপ্ত প্রতিভা আছে।
ভুলে গেলাম, আমার ডিরেক্টরের নাম কী যেন বললে ঠিক মনে রাখতে পারছিনা। ব্রেন একদম আউলাইয়া গেছে।
ছহিলুদ্দি।
ছহিলুদ্দিসাহেব উৎফুল্ল হয়ে বলে, এই জ্যান্ডার ফিল্ডে নাজনীন ম্যাডামকে
দেখছুনা। কী তার দাপট আর পরিচিতি; বড় একখান নারী নেত্রী। কোথায় আছেলেন তিনি, হাসব্যান্ড তাকে ডিভোর্স দ্যায়, খাবার পয়সাই জুটতো না, এই তারেক ভাইতো তাকে জ্যান্ডার ওয়ার্ল্ডে সুপারষ্টার বানায়ছেন। এখনতো বিএমডব্লিউ হাকায়।
তারেক সাহেব ডিনার চেয়ার ছেড়ে উঠে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে হোটেলের কাউন্টরের দিক চলে যান। এবার আমার ডিরেক্টর আসল কথা পাড়েন। শোন মালতী তারেক ভাইেেয়র মনে তোমাকে খুব ধরেছে। আর উনার ক্ষমতাতো তুমি জানো। কিন্তু উনার একখান গুন আছে, খুবই পরোপকারী। উনি ইচ্ছে কইরলে তোমাকে একটা এনজিও কইরা দিবার পারেন। বোঝতো উনিই আমাগো সব ফান্ড যোগাইত্যাছেন। তুমি একটা কাজ করো আগামীকাল উনার লগে কয়েকদিনের জন্য রাঙ্গামাটি ঘুইরা আও। একটা প্লিজার ট্রিপ আর কী। তুমার কপাল খুইলা যাইবো।
আমি একটু চুপ করে থাকি কিছু বলিনা। ভয় ও ঘৃণা দুটোই আমার ভিতর তখন কাজ করছিল। ছহিলুদ্দি আবার বলে, এতা ভাবনের কী, মাত্রতো কয়েকদিন। এইডাইতো হইলো গিয়া তুমার লাইফের একটা সুযুগ। সুযুগতো সগোল সময় আয়না। ভয় করলে আমি না হয় তোমার লগে যাইউম। কেউ জানবার পারবেনা। লাইফ গইড়্যা ন্যাওনের এইডাইতো পারফিক্ট টাইম।
তাদের জান্তব চেহারা বেরিয়ে এলো। আমার মনে হলো কুত্তার বাচ্চার গালে স্যান্ডেল খুলে কয়েক ঘা মারি। কিন্তু আমি তা পারিনি আমার শিকড় দুর্বল। একেতো মেয়ে সেটাও বড় কারন ছিলনা। দারিদ্রতা আর হিন্দু পরিবার থেকে এসেছি এটাই আমাকে কাবু করার চেষ্টা রাখে। আমি বর্ষা মাথায় হোটেল থেকে বেরিয়ে ভিজে ভিজে সোজা বাসায় ফিরে আসি।
মালতী আবার ফুঁপাচ্ছে, ওর গৌর মুখমন্ডল রক্তবরন ধারণ করে। গন্ডদেশ বেয়ে জলধারা নেমে আসে। আমি আর উত্তেজনা দমন করতে পারিনা। সামনের চায়ের টেবিলে প্রচন্ড ঘুষি মেরে দাড়িয়ে উঠে বলি, সান অব আ বীচ, হালার পুতরে আমি ইট বান্ধুম, টাঙ্গাইলে আউক। আর ঐ জেন্ডাররে পাইলে সোগায় আহেলা বাঁশ ঢুকাইউম ।
EmoticonEmoticon