রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮

ষ্টেইটাস-কৌ মেনে সিদ্ধান্ত নির্বাচনেরঃ কী প্রাপ্তি ও শিক্ষা হলো জনগণের?

রাষ্ট্র যখন স্বৈরতন্ত্র কবলিত, তখন গণতন্ত্র ক্রিয়া করে না। এটি একটি সাধারণ যৌক্তিক সত্যবোধ। আর, এ-কথা যদি সত্য হয় যে, স্বৈরতন্ত্র কবলিত রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ক্রিয়া করে না, তাহলে একথাও সত্য হতে বাধ্য যে, শাসক নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নির্বাচনও স্বৈরতন্ত্রে ক্রিয়া করে না।

বাংলাদেশের যে-রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নানা সংখ্যার দাবী উত্থাপন করে বলেছিলো যে, দেশে স্বৈরশাসন বা ফ্যাশিবাদ চলছে এবং জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়, আজ তারাই তাদের দাবী অপূরিত রেখে, আন্দোলনের পথে না যেয়ে শেষপর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনেই 'ষ্টেইটাস-কৌ' মেনে নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে। এর অর্থ কী?

প্রথমতঃ এই জোটগুলো নানা দফা দাবী (যেমন, ৭-দফা) নিয়ে জনগণের কাছে যে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পদত্যাগ ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচনের জন্যে আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করছে না।

দ্বিতীয়তঃ দাবী পূরণ ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার মাধ্যমে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার করতে চাইছে না; তারা চাইছে স্বৈরতন্ত্রের বৈধতার জন্যে প্রয়োজনীয় যে 'বিরোধী দল' দরকার, সেই ভূমিকায় পালন করতে।

তৃতীয়তঃ জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার, যা বর্তমান সরকার নানা স্বৈরতান্ত্রিক আইনের মধ্য দিয়ে খর্ব করেছে, তথাকথিত এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারী দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

শেষতঃ সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বুঝতে হবে যে, তাদের অধিকারের জন্যে প্রকৃতই আন্দোলনে ও সংগ্রামে প্রতিশ্রুতিশীল আদৌ কোনো রাজনৈতিক দল সে-দেশে নেই। তাই, জনগণের সচেতন ও অগ্রসর অংশকে এটি বুঝে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।

ইতিহাসে মানুষের মুক্তির জন্যে কোনো ফাঁড়িপথ নেই। যতো সময় আর শ্রম-ঘাম-রক্তই লাগুক না কেনো, অধিকার-বঞ্চিত জনগণের নিজেদের ভেতর থেকে রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখল করার মতো রাজনৈতিক শক্তির জন্ম দিয়ে তাকে বিজয়ী করার কোনো বিকল্প পথ নেই।


EmoticonEmoticon