নারী সাংবাদিকের প্রতি একজন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকের অপমানসূচক মন্তব্য করার কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মামলা করা জন্যে উৎসাহিত করলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার একটি লেখার কথা স্মরণে এলো, যা আমি তিন ঠিক ৩ বছর আগে এই অক্টোবর মাসেই লিখেছিলাম, যা আজ প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে।
২০১৫ সালের ঐ সময়টাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে, আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের লণ্ডনে। খালেদা জিয়া একটি সভায় বলেছিলেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ থেকেও দেশপ্রেমিক নেতাদের নিয়ে দেশ চালানো হবে।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে ৪ঠা অক্টোবর তিনি সাংবাদিকদের সাথে গণভবনে মিলিত হন। তখন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়া সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেন, যা উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির রোল তোলে, এবং বিষয়টি সংবাদ-মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
তখন, আমি শেখ হাসিনার উদ্দেশে সবিনয়ে একটি লেখা লিখি, যা আমার ক্ষমতা অনুযায়ী যেখানে প্রকাশ করতে পারি - অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে - প্রকাশ করি। লেখাটি নীচে পুনঃপ্রকাশ করছি।
২৩/১০/২০১৮
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি
আমার লেখায় আমি আপনাকে আপনার পিতার চেয়ে সফল রাজনীতিক হিসেবে বর্ণনা করেছি। আমি এও বলেছি, পুরুষতান্ত্রিক বাঙালী সমাজে বংশের নাম রাখতে পিতা-মাতা পুত্র কামনা করেন, কিন্তু আপনি প্রমাণ করেছেন পুত্রের চেয়ে কন্যা যোগ্যতর হতে পারে।
আমরা জানি, খালেদা জিয়ার সাথে আপনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। এতে খারাপের কিছু নেই। তবে জাতি আশা করে, আপনারা পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন।
এটি দুঃখের যে, আপনার স্বামী বিগত এবং খালেদা জিয়ারও তাই। কিন্তু এটি লজ্জার যে, আপনি একজন বিধবা হয়ে আরেক বিধবার ব্যাপারে "উনি আওয়ামীলীগে কীকরে প্রেমিক খুঁজে পেলেন আমি জানি না, তাহলে ফালুর কী হবে" বলে আদি রসাত্মক মন্তব্য করেছেন এবং তা শুনে সমবেত পুরুষেরা আদিরসে উদ্দীপ্ত হয়ে হেসেছেন।
এতে কি খালেদা জিয়াই অপমানিত হয়েছেন? আপনি যে তাঁকে অপমান করলেন, তাতে নারী হিসেবে কি আপনার অপমান হয়নি?
আমি উদ্বিগ্ন এই বুঝে যে, একটি জাতির শীর্ষ নেতৃত্ব যখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে সম্মান প্রদর্শন করেন না, তখন সমগ্র জাতির মধ্যে এটিই একটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড বা মান হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। সামান্যতম মতভিন্নতায় অপমান-বাণ নিক্ষিপ্ত হতে থাকে।
আমি একজন সাধারণ মর্য্যাদাবোধ সম্পন্ন ও ভয়শূন্য বাঙালী হিসেবে আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখলাম। আপনার পিতাও ভয়শূন্য ছিলেন। দয়াকরে বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
EmoticonEmoticon