রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮

মান্না মেণ্টাল কমপ্লেক্স

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময়কার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং পরবর্তীতে সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য নেতা হচ্ছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, যিনি প্রথমে করেছেন জাসদ, তারপর বাসদ, তারপর 'তলবী' বাসদ, তারপর জনতা মুক্তি পার্টি, তারপর আওয়ামী লীগ, তারপর নাগরিক ঐক্য। বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে ফেনোমেন্যাল বলে জনস্বার্থে বিশ্লেষণের দাবী রাখে।

অস্বাভাবিক রকমের দল পরিবর্তনকারী চঞ্চল ও অস্থির প্রকৃতির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না নিঃসন্দেহে পলিটিক্যাল সাইকোলজির জন্যে একটি কৌতুহল ও গবেষণার বিষয়। কারণ, একমাত্র রাজনৈতিক-মনোবিজ্ঞানই তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারে।

মাহমুদুর রহমান মান্না যে খুব খারাপ মানুষ, তা মোটেও নয়। বরং মনমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সত্তর দশকের শেষ দিকে, যখন তিনি ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। তাঁর অসংখ্য ভক্তের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ও অস্থিরতার কারণ কী?

মাহমুদুর রহমান মান্নার এই রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আমি তাঁর চরিত্রের ত্রুটি হিসেবে চিত্রিত করবো না। আমি মনে করি, এটি একটি মানসিক সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে অতিসচেতন হয়ে ওঠে কিন্তু তার প্রত্যক্ষিত যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে মানসিক পীড়নে ভোগে।

আমরা যদি মাহমুদুর রহমান মান্নার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করি, আমরা দেখবো, প্রতিটি দল করার ক্ষেত্রেই তিনি একটি যথাযথ গুরুত্বপ্রাপ্তিতে বঞ্চনাবোধে ভুগেছেন। জাসদ, বাসদ, তলবী বাসদ, জনতামুক্তি পার্টি করা-কালে তিনি এই বঞ্চনাবোধে ভুগেছেন বলে তিনি ঐ দলগুলো করতে পারেননি।

মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগে যোগদান করলে, শেখ হাসিনা তাঁকে কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বস্তুতঃ 'কয়েকজনের মধ্যে একজন' হয়ে থাকার লোক নন বলে তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগে থাকা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষে মাহমুদুর রহমান মান্না গঠন করলেন নাগরিক ঐক্য, যেখানে তিনিই সবার শীর্ষে এবং তাঁর উপরে কেউ নেই। রাজনীতিতে ব্যক্তি-সর্বস্বতার বিরুদ্ধে অতীতে নীতিকথা বললেও, এবার তিনি নিজের ব্যানারে নিজের ছবি যুক্ত করে তার নীচে সভাসমিতি করতে শুরু করলেন।

নাগরিক ঐক্যের শীর্ষনেতা হয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার ইম্পোর্ট্যান্স এ্যাপেটাইট বা গুরুত্বপ্রাপ্তির ক্ষুধা খানিকটা নিবৃত্ত হলেও, যথেষ্ট হলো না। কারণ, সম্ভবতঃ নিজের ব্যক্তিত্বের যে প্রতিবিম্ব তাঁর নিজের মনে তিনি প্রত্যক্ষ করেন, তার তুলনায় তার দলটি নেহাৎই অপর্যাপ্ত।

তাই, নিজের দলের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা না করে তিনি গেলেন বিএনপিকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সরকার-বিরোধী আন্দোলন করাতে এবং তা করতে গিয়ে তিনি টেলিফৌন ষড়যন্ত্রে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে প্রথমে আত্মগোপন ও কারাবরণ করেন। অথচ সে-সময় তিনি ডঃ কামাল হোসেনের মতো লিবার‍্যাল ও সিপিবি-বাসদের মতো তথাকথিত বামদের নিয়ে জোট বাঁধার চেষ্টা করছিলেন, এবং সে-কারণে কেউ তাঁর নিবর্তনে প্রথমে কেউ প্রতিবাদটুকু পর্যন্ত করেনি।

মাহমুদুর রহমান মান্নার এই রাজনৈতিক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাটাকে আমি আপাত 'মান্না মেণ্টাল কমপ্লেক্স' নাম দিয়ে আমার বিশ্লেষণ শুরু করলাম, যার উপসংহার এখানেই টানছি না।


EmoticonEmoticon