একটি আপাত নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি জোট বা বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় যাবে। মানুষের এই বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়া বা বিএনপিকে ভোট দেওয়ার যতটা না বিএনপির জনগণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা তার চেয়ে বড় কথা আওয়ামীলীগ জোটের দুঃশাসন। আওয়ামীগ গত দশ বছর এদেশের জনগণকে যে পরিমাণ যন্ত্রণার মধ্যে রেখেছে, আওয়ামীলীগ গুণ্ডারা যে পরিমাণ নিপীড়ন নির্যাতন এবং জনগণের সম্পদ ক্ষমতার মাধ্যমে দখল করেছে। এর থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জনগণ আকুতি করছে! ফলে যদি মোটামুটি একটা ফেয়ার ইলেকশন হয় তবে ক্ষমতা বিএনপির দিকেই ঝুলে আছে।
কিন্তু ক্ষমতাশালী আওয়ামীলীগ সহজে ক্ষমতা হাতছাড়া করতে দিবে না। আবার ৫ জানুয়ারী মার্কা একটি ইলেকশন করার সুযোগ তাদের নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপের কারণে কিছুটা নিরপেক্ষতার ভাব দেখাবে। তবে বিজয়ী হওয়ার সব কৌশল তারা প্রয়োগ করবে। ভোট কারচুপি, ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট নিজেদের ভাগে আনা, কেন্দ্র দখল, জালভোট, সরকারী আমলাদের চাপ দিয়ে, সুবিধা দিয়ে নানা উপায়ে বিজয় ধরে রাখার চেষ্টা করবে। তবে নানা কৌশলের মধ্যেও এদের পরাজিত করা সম্ভব যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষা থাকে। তবে সহজে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হারাবে, এটা কখনই চাইবে না।
এখন প্রশ্ন হল যে কোনভাবে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রাখা না একটা মোটামুটি ভাল নির্বাচনে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে সেটাকে স্বাগত জানানো? যদিও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে লুটপাট অপরাজনীতি খুন সন্ত্রাস ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে এটা মনে করার কারণ নেই। তবে আপাতভাবে জনগণ কিছুটা আওয়ামীলীগ বদমাশগুলো থেকে নিস্তার পেতে পারে। আবার বিএনপি যদি ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যায় তবে গত দশ বছরের তাদের যে অভিজ্ঞতা সেটা থেকে কিছুটা না শিখে তবে জনগণের আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এজন্য যারাই ক্ষমতায় যাক এটা বড় কথা নয় বড় কথা হল জনগণ যাতে তার ভোটদানের সুযোগ পায়।
এদেশের বামপন্থী দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ায় বর্তমানে সুযোগ তেমন নাই বা সেই ধরণের গণ সম্পৃক্ততা তাদের নেই। ফলে ভোটে দাঁড়ালেও বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যারাই ক্ষমতায় যাক সেই দাবি জানাতে হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন দুর্নীতি কমিশন, খুন ধর্ষণ বিনাবিচারে হত্যা এগুলো বন্ধ করা, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার ক্ষেত্রে কঠিন শাস্তির বিধান। দুর্নীতির সাথে যুক্ত রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে আযোগ্য ঘোষণা, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহির একক ক্ষমতাকে ভাগাভাগি করে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দলীয় সাংসদ যাতে নিজ দলের মতামতের বাইরে ভোট দিতে পারে সেই দাবি জানানো। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইন বাতিল করা। মত প্রকাশ, সভা সমাবেশের অধিকার যাতে প্রদান করা হয় সেই দাবি জানানো। এগুলো বিভিন্ন দল সংগঠন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচার করা। এই দাবিগুলো একদিনে মেনে নেবে না তবে বেশি বেশি প্রচারিত হলে জনগণের সামনে আসবে। ক্ষমতায় যারাই যাবে এদের হাত থেকে সহজে জনগণ মুক্ত হতে পারবে না। তবে সর্বোপরি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জোড়ালো হোক ।
EmoticonEmoticon