রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮

ধর্মনিরপেক্ষতাঃ স্বাধীনতার ঘোষণায় ছিলো না?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের লক্ষ্য 'ধর্মনিপেক্ষতা' ছিলো না বলে যারা দাবী তুলেন, তারা তাদের মতো 'যুক্তি' দিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণায় যেখানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দটি পর্যন্ত নেই, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবী অযৌক্তিক।

আমি বলি, ঠিক,  সেখানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দটি নেই বটে। সেখানে আরও জরুরি শব্দ নেই। সেখানে 'গণতন্ত্র' শব্দটিও নেই। তো?

স্বাধীনতার ঘোষণায় ধর্মনিরপেক্ষতা নেই বলে যদি তার পরবর্তী অন্তর্ভুক্তি অযৌক্তিক হয়, একই যুক্তিতে স্বাধীনতার ঘোষণায় 'গণতন্ত্র' নেই বলে বাংলদেশের গণতন্ত্র থাকাও কি অযৌক্তিক হয়ে যায় না?

বস্তুতঃ স্বাধীনতার ঘোষণায় আছে ৩টি নীতির কথা, আর সেগুলো হচ্ছে (১) সাম্য, (২) মানবিক মর্য্য্যাদা ও (৩) সামাজিক ন্যায় বিচার। ইংরেজীতে লেখা আছে, "in order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice", যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা গণতন্ত্রের কথা লিখা নেই।

তার অর্থ কি এই যে, বাংলাদেশ হবে একটি ধর্মভিত্তিক অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র? শয়তানের উকিলেরা এমনটি বললে বলতে পারে।

কিন্তু ঐ যে "সাম্য" কথাটি বলা হয়েছে সেখানেই দেশের সকল মানুষের সম-অধিকারের প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ, সকল মানুষের মধ্যে যদি কেউ নিজের ধর্মের কিংবা নিজের অঞ্চলের কিংবা নিজের লিঙ্গের আধিপত্য চায়, তা ঐ সাম্য নীতির পরিপন্থী হবে।

অধিকন্তু, সেখানেই বলা হয়েছে আগামীতে যথাযথভাবে একটি সংবিধান রচনার কথা বলা হয়েছে। আর, আমরা জানি, সে-মোতাবেক ১৯৭২ সালে সংবিধান রচিত হলে 'সাম্য, মানবিক মর্য্যাদা ও সামজিক ন্যায়বিচার' নীতিত্রই রাষ্ট্রের চার মূলনীতি হিসেবে 'জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র রূপে সুনির্দিষ্ট হয়।

সুতরাং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দেশটিতে বাঙালী জাতিগত আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে ঐক্যের বন্ধন, ধর্মনিপেক্ষ সমাজ গঠন, গণতান্ত্রিক শাসন ও সমাজতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

এই চার মূলনীতির পরিপন্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে পারে না।


EmoticonEmoticon