কোটা আন্দোলন আর সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে আদর্শবাদী আন্দোলন এক বিষয় নয়। কোটা সংস্কার ছিল প্রচলিত সিস্টেম আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠিক রেখে একটি পেটিবুর্জোয়া চেতনার ভাবমানস। যার পেছনে আবশ্য না পাওয়া বেদনা, ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প আছে। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনমান পরিবর্তনের জন্য যে লড়াই তা দীর্ঘ এবং সংগ্রামী। ফলে এখানে শুরুতে হাজার হাজার মানুষ চলে আসবে এমন নয়। কোটা আন্দোলনকে আমি সমর্থন জানিয়েছিলাম এই কারণে যে সমাজের মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরা নানা ধরণের বৈষম্যের কারণে সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে কিছুটা হলে যদি সুযোগ হয়। এর বাইরে কোটা আন্দোলন বড় কিছু করার বাস্তবতা ছিল না। যেহেতু একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র নানা ধরণের বৈষম্যের সমষ্টি। এজন্য এখান থেকে বের হতে হলে সেই রাষ্ট্রে যারা বেশি বৈষম্যের শিকার হয় তাদেরকে লড়াই গড়ে তুলতে হবে। ফলে সমাজের নিম্নবৃত্ত, শ্রমিক কৃষক সাধারণ জনগণের লড়াই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভাবধারার রাজনৈতিক বিকাশ ছাড়া রাষ্ট্রের বৈষম্য বিলুপ্ত কখনই সম্ভব নয়। এই কারণে আদর্শবাদী আন্দোলন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
আজকে নুরুল হক নুরু ক্ষমতাসীনদের সাথে যুক্ত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিজের মায়ের চেহারার মত মনে হয়, এই সবকিছু তার রাজনৈতিক চিন্তার প্রকাশ। সে এর বাইরে গিয়ে বড় কিছু করে ফেলবে তার সামনে কোন বৈপ্লবিক আদর্শ ছিল না। অন্যদিকে বাম রাজনীতির যে তরুণরা লড়াই করছে, আন্দোলন করছে কারণ তার সামনে পরিবর্তনের আদর্শ আছে, স্বপ্ন আছে। নীতির ক্ষেত্রে সে অবিচল। এর মধ্যে ভুল নাই ঠিক নয়, ভুল আছে। তবে নীতিই হল তার পথ, পরিবর্তন হল তার লড়াই। এজন্য সে সিস্টেমকে আঘাত করতে চায়। এই আঘাতের লক্ষ্যে সে কাজ করে। সে নীতি বিসর্জন দিতে পারে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এরকম নীতি বিসর্জন দেওয়া লোকের সংখ্যা কম নয়। হ্যাঁ মানুষের মধ্যে লোভ লালসা তার বৈশিষ্ট্যজাত। ফলে লোভে পড়ে নীতি কেউ হারিয়ে ফেলে বা বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু সংখ্যা খুব কম পাবেন। জীবন যৌবনের বড় অংশ মানুষের জন্য, সমাজ পরিবর্তনের জন্য অনেকেই বিসর্জন দিয়েছেন এই উদাহরণ তো আছে? তাহলে দেখা যাবে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল। এত ত্যাগের মহিমা এরা কোথায় পায়? কারণ তার সামনে এমন এক স্বপ্ন থাকে যা ব্যক্তিগত জীবন নিজের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়।
অনেকেই বাম রাজনীতির লোকদের সমালোচনা করেন। কিন্তু খোঁজে দেখুন দুর্নীতি লুটপাটের সাথে কারা যুক্ত? বামদের মধ্যে এই সংখ্যা পাওয়া দুরুহ হবে। তবে যারা ক্ষমতার অংশ হয়েছেন ভিন্ন কথা। বামদের সমালোচনা আমিও করি। তবে তা গঠনমূলক করার চেষ্টা করি। আবার তাদের পক্ষে অবস্থান নেই। আমি জানি যারা মার্ক্সবাদ ভালবাসেন তারা সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক। তাদের ত্যাগ বিশাল। এজন্য এখন কিছু দুর্বলতা দেখলেও এত গুরুত্ব দেই না। যাক বাবা অন্তত একটি লড়াইয়ের শক্তি গড়ে উঠুক। সমাজে লড়াইয়ের কোন শক্তি নাই, শুধু আছে লুটের শক্তি। সেই সমাজ ঠিকমত আগাতে পারে না। সামাজিক দ্বন্দ্ব ছাড়া সমাজ পরিবর্তন হয় না। ফলে একটি শক্তিশালী লড়াইয়ের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ।
আমি জানি বামদের নানা পিছুটান আছে, সুবিধাবাদ আছে। তারপরও বামদের উপর ভরসা রাখতে চাই। সমাজের মৌলিক পরিবির্তনের লক্ষ্যে মার্ক্সবাদ একটি আদর্শ। আর সেই আদর্শকে ধারণ করে যে লড়ে যায় সে আমার কমরেড। আমি তাকে ভালবাসি। আজ নুরুর উপর আশা করলে হবে না, আশা করতে হবে লিটন নন্দীর উপর, বেনজিরের উপর, তানহার উপর এবং অন্যরা যারা আছে তাদের উপর। কারণ সে শুধু নিজের জন্য লড়ে না, সে লড়তে চায় সমাজ পরিবর্তনের জন্য। এজন্য নিশ্চই সে আপনারও বন্ধু?
EmoticonEmoticon