তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা ও মরুকরণের হাত থেকে উত্তরবঙ্গকে রক্ষা করার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর উদ্যোগে ২০-২১ মার্চ ২০১৯ দুইদিনব্যাপী বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারেজ পর্যন্ত রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ ২০ মার্চ বেলা ১১ টায় বগুড়ার সাতমাথায় বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক অ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
রোডমার্চের উদ্বোধন করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগ্রামী জননেতা কমরেড খালেকুজ্জামান।আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্যামল ভট্টাচার্য, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ,কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন।নওগাঁ জেলার বাসদ সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল,সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক নবকুমার কর্মকার,বগুড়া জেলা সদস্য সচিব সাইফুজ্জামান টুটুল,বাসদ নাটোর জেলা নেতা দেবাশীষ রায়,রাজশাহী জেলা সমন্বয়ক আলফাজ হোসেন যুবরাজ,শহিদুল ইসলাম,দিলরুবা নূরী,শ্যামল বর্মন,রাধা রানী বর্মনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন,“১২০০ নদীর দেশ বাংলাদেশ ভারতের ক্রমাগত পানি আগ্রাসন এবং সরকারের ভুল পানি ব্যবস্থাপনার কারণে আজ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে যার মধ্যে ৫৪ টি এসেছে ভারতের মধ্য দিয়ে। ভারত ইতিমধ্যে ৫১ টি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার শুরু করেছে এবং আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাংলাদেশে চারদিকে বাঁধের মালা তৈরী করতে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা অববাহিকা পানির তীব্র সংকটে পড়েছে এখন আন্তর্জাতিক সমস্ত নীতিমালা একের পর এক লংঘন করে যাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের পানি ও পলির প্রভাবে। ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আজ ধ্বংসের পথে।ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ,কৃষিকাজ,মৎস্য সম্পদ ও নৌপরিবহন আজ হুমকীর মুখে।আমাদের দেশের সরকার ভারত কর্তৃক এই আন্তর্জাতিক নদী ও পানি নীতি এবং প্রকৃতি পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ডের যথাযথ প্রতিবাদ করতে শুধু ব্যর্থ হচ্ছে তাই নয় নতজানু নীতি নিয়ে চলছে যা বাংলাদেশের প্রকৃতির জন্য ভয়াবহ আর জাতি হিসেবে লজ্জার।”
তিনি আরো বলেন,“উত্তর বঙ্গের প্রধান নদী এবং বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তা ও ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার। উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ক্রমাগত একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে খরস্রোতা তিস্তা আজ মৃতপ্রায়, পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁচেছে। ভারত কখনো কেন্দ্র কখনো রাজ্যের দোহাই দিয়ে প্রতারণামূলক আশ্বাসে বাংলাদেশকে পানিচুক্তি থেকে বঞ্চিত করছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-সহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল দল সমুহ দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। শাসক দলগুলোর কাছে ক্ষমতা দখল, অর্থনৈতিক লুটপাট ও রাজনৈতিক দমন পীড়নের বাইরে দেশ, জনগণ, নদী, বন এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কোনটাই গুরুত্ব পায় না। ফলে এই সর্বনাশ রুখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।”
উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তারা বলেন “ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক নাকি সর্বকালের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ে আছে বলে শাসকবর্গ দাবি করছে কিন্তু ভারতের পানি আগ্রাসনে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত। সীমান্তে কাটাতারের বেড়া,গুলিবর্ষণ আর আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করা কি বন্ধুত্বের নিদর্শন? বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, প্রকৃতি পরিবেশ বিনাশী তৎপরতা বন্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মোদীর সাথে টেলিফোনে কথা হয় কিন্তু পানি নিয়ে কথা হয় না কেন তা জাতি জানতে চায়। বাংলাদেশের নদী ও পানি সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় অববাহিকা ভিত্তিক তৎপরতা চালানো প্রয়োজন।
তিস্তার পানি ব্যবহার করে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল ভারতের পানি প্রত্যাহার করার ফলে তা আজ ভেস্তে যেতে চলেছে। ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সব নেবে অথচ ন্যায্য পানির হিস্যা দেবে না এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না।"
বক্তারা সারাদেশের মানুষকে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে পানির দাবিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বগুড়া শহর প্রদক্ষিণ করে রোডমার্চটি তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে রোডমার্চ মহাস্থানগড়, মোকামতলা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, পীরগঞ্জ, শঠীবাড়ী, মিঠাপুকুর, সমাবেশ করে রংপুরে রাত্রীযাপন এবং ২১ মার্চ সকাল ১০টায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ, পাগলাপীর, বড়ভিটা, জলাঢাকা, চাপানীরহাট এ পথসভা শেষে তিস্তা ব্যারেজ সাধুর বাজার গিয়ে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
EmoticonEmoticon