রবিবার, ১২ মে, ২০১৯

আমরা কি রকম ভাবে বেঁচে আছি একটি বার এসে দেখে যাও উন্নয়নবাদীরা।

রাস্তা হচ্ছে ব্রীজ হচ্ছে,কালভার্ট হচ্ছে,ফ্লাইওভার হচ্ছে,পদ্মা সেতুটাও এবার হয়ে যাচ্ছে । মহাকাশে স্যাটেলাইট উড়ছে। চারদিকে শুধু  উন্নয়ন আর উন্নয়ন। সবকিছুর উন্নয়ন হচ্ছে শুধু উন্নয়ন হচ্ছে না আমাদের কৃষকদের শ্রমিকদের। আজ শ্রমিক তার ন্যায্য মুজুরী থেকে বঞ্চিত আর কৃষক পায়না ফসলের ন্যায্য দাম।


কৃষক আগে ছিল একটি স্বতন্ত্র স্বত্তা। নিজের জমিতে অথবা অন্যের জমি লিজ নিয়ে নিজ উদ্যোগে ইচ্ছামতো ফসল ফলাতো ।তার পর ফসল উঠলে তা বাজারজাত করত। কিন্তু সেখানে তারা ফসলের ন্যায্য মুল্য পেত খুব কম সময়। কারন এই বাজার ব্যবস্থায় একটা সিন্ডিকেট থাকে যারা দাম নিয়ন্ত্রন করে। সেই সিন্ডিকেট টা হলো বড় বড় শিল্প কারখানার প্রতিনিধি বা দালাল। যেমন ধরুন প্রান কোম্পানী। এই কোম্পানী আটার প্যাকেট বিক্রি করে। কিন্তু আগে খোলা আটা পাওয়া যেত , তখনও সিন্ডিকেট ছিল। এখন প্রান কোম্পানী প্যাকেটজাত আটা বিক্রির জন্য তার চাই গম। এখন সে যদি কৃষকের নিকট থেকে গম ক্রয় করে তাহলে তার কেজি প্রতি গমের দাম দিতে হবে ধরি ৫ টাকা। কিন্তু তারপর সেটাকে প্রসেসিং করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করলে দাম পাবে কেজি প্রতি ধরি ৩০ টাকা। এতে তার সবকিছু বাদ দিয়ে ৫ টাকা লাভ থাকলো । কিন্তু পুজিবাদ এখানেই সন্তুষ্ট থাকতে রাজি না। তাই সে আরো লাভ চায় । এজন্য সে চিন্তা করবে আমি যদি কৃষকের কাছ থেকে আরো কমে কিনতে পারি তাহলে আমার আরো বেশি লাভ হবে । তাই সে সিন্ডিকেট তৈরী করে এবং তাদেরকে সে টাকা পে করে । এই সিন্ডিকেট হতে পারে স্থানীয় রাজনীতিবিদ,কৃষকনেতা,প্রশাসন কিংবা অন্য কেউ ।

 কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে । সমস্যা হলো এই পদ্ধতিটা একটু জটিল আর ডিপেন্ডবল যেকোন সময় ফেল করতে পারে । তাই আজকাল কোম্পানীগুলো এই ঝুঁকিতে যেতে চায় না। এইকারনেই তারা ভিন্ন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে । সেটা হলো কোম্পানী নিজেই জমি কিনে অথবা লিজ নিয়ে নিজেই গম উৎপাদন করবে। এবং দৈনিক কিংবা মাসিক চুক্তিতে ওইসব কৃষকদেরকেই নিয়োগ দিবে । ফলে কাচামালের বাজার তার নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

এখন সমস্যা হলো যারা এর বাইরে চাষাবাদ করে গম উৎপাদন করবে তারা ন্যায্য মুল্য পাবে কি করে?? কারন কোম্পানীগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে এমন মগজ ধোলাই করে যে যাতে করে কেউ আর খোলা আটা না কিনে । ফলে ঐসব স্বতন্ত্র কৃষকদের বাধ্য হয়ে কোম্পানীর নিকট কোম্পানীর ইচ্ছামত মূল্যে গম বিক্রি করতে হয়।

যদিও আমরা এখনো কিছু খোলা আটা পাই, সেসব যারা বিক্রি করে তারা তাদের মনের মত করে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে কারন তাদেরও লাভ করতে হবে উচ্চ মাত্রায় এখন এসব ব্যবসায়ীদের তো লাখ লাখ শ্রমিক নাই যে তাদের ঠকাবে, এজন্যে তারা কৃষকের নিকট থেকে ক্রয় করে ভেজাল মিশিয়ে বাজারজাত করে ।

আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা পাহারা দেয় আমদের সরকার । কারন তার নির্বাচন করতে ব্যপক টাকা খরচ হয় যা এইসমস্ত কোম্পানীগুলো দিয়ে থাকে ( অফ দা রেকর্ট ) ।

আসলে এই কারনেই কৃষক তার ফসলের ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে না । আরো অনেক কারন আছে যা এই প্রবন্ধে আলোচনা করছি না।

আর শ্রমিক ঠকানোর বিষয়টাও সিম্পল কারন কোম্পানী চায় কাচামালের পর যেই সিস্টেম এ আটা প্যাকেটজাত হয় তাতে আর কিভাবে খরচ কমানো যায় সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়গুলো থাকে কন্সট্যান্ট শুধু শ্রমিকের মজুরি কমালেই উতপাদন খরচ কমে।

তাই আজ আমাদের কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে খেতে আগুন দেয় অথবা আত্মহত্যা করে । আর শ্রমিক হয়ে যায় নিঃস্ব ।




EmoticonEmoticon