বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৯

শ্রীলংকা সেমিনার  ....

কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সেমিনারের  বিষয় ছিল  Proposed ILO Convention on Ending Violence and Harassment in the World of Work.
এবছর জুন মাসে জেনেভায় ILO’ র ILC অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । আইএলও' শতবর্ষ উপলক্ষে নারীর শোভন কাজ ও সুরক্ষা বিষয়ে সেখানে এই কনভেশন গ্রহন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে । আইএলও'র যেকোন কনভেনশন করতে হলে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয় । প্রথম প্রস্তাবনা , হোয়াইট রিপোর্ট, ইয়েলো রিপোর্ট, ব্রাউন রিপোর্ট, ব্লু রিপোর্ট এবং এগুলোর উপর মতামত নেয়ার পর আইএলসি’তে তা উথ্থাপন করা হয় । নেপালে ব্রাউন রিপোর্টের উপর আলোচনা হয়েছিল জানুয়ারি মাসে । এতে ট্রেড ইউনিয়ন সমুহের কিছু প্রস্তাব এবং  সংশোধনী গ্রহন করা হয় । এখন শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হলো ব্লু রিপোর্টের উপর আলোচনা । এখানে গৃহীত পরামর্শগুলো দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের কাছে পাঠানো হবে যাতে তারা আই এলসিতে তা উথ্থাপন করতে পারে।

সারা দুনিয়ায় কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান একটু দেখে নেয়া যাক - 
1. এত উন্নয়নের ডামাডোলের মধ্যেও বৈষম্য এবং দারিদ্র কমছে না। সারা পৃথিবীতে ১৩০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে । যাদের ৭০% হচ্ছে নারী।
2. বৈষম্য দূরীকরনের কাজ এই গতিতে চললে ৪৫০ বছর লাগবে নারী পুরুষের সমতা অর্জন করতে । ( তেতুল তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে কত বছর লাগবে তা বলা যাচ্ছে না )
3. জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মাত্র ৫% শতাংশ উচ্চ পদে নারীরা আছে।
4. ১৫ বছরের কম বয়সী ৮৭৬ মিলিয়ন শিশু আছে যারা নিরক্ষর । এদের ৬৬% কন্যা শিশু ।
5. বিশ্বব্যাপী নারীরা পুরুষের তুলনায় একই কাজে ৩০-৪০ শতাংশ কম মজুরি পায় ।
6. বৃটেনে পুর্ণকালিন কাজে নারীরা ঘন্টাপ্রতি ১৮% কম মজুরি পায় ।
7. ২০০৫ সালে সারা পৃথিবীতে ৪২,৮৩২ জন এমপি’র মধ্যে নারী ছিলেন ১৫.৭%। মন্ত্রীদের ৬% ছিলেন নারী।
8. প্রতিবছর ৫ লাখ নারী সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
9. ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারীদের মৃত্যুর হার পুরুষের তুলনায় ৭৫% বেশি।
10. বিশ্বের ৪০ টির বেশি দেশে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন আছে ।      

এসব তো আছেই তার উপর নারীর উপর সহিংসতা ও হয়রানি চলছে বিশ্বব্যাপী। তাই Violence and Harassment এই দুটোকে একসাথে বিবেচনা করার দাবী উঠেছে ।
শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবী উঠলেই বিভিন্ন দেশের সরকার এবং মালিক পক্ষ কিছু আপত্তি তুলেছে। প্রশ্ন তুলেছে, মালিক কে ? কর্মক্ষেত্র কাকে বলবো ? যৌন সহিংসতা কি এবং যৌন হয়রানি কি ? কে দায়ী হবে , কারা দায়ীত্ব নেবে ? তাদের বক্তব্য Violence এবং Harassment কে আলাদা করে দেখতে হবে এবং একই কনভেনশনে উল্লেখ করা যাবে না। এবিষয়ে কনভেশন না করে একটা recommendation দিলেই চলবে ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতির একটা চিত্র তুলে ধরলাম। গত ৫ মাসে ৪৫০ জনের বেশি নারী ধর্ষিত এবং নির্যাতিত হয়েছে । Violence এর ঘটনা দেখা যায়, শোনা যায় কিন্তু হয়রানির ঘটনা অপ্রকাশ্য থাকে । কর্মক্ষেত্রে এবং যাওয়া আসার পথে নারী নিপীড়িত হলে তার বিচার এবং সুরক্ষার দায়ীত্ব মালিকপক্ষ এবং সরকারকে নিতে হবে । দেশে এবং দেশের বাইরে বিপুল সংখ্যক নারী এখন কর্মক্ষেত্রে আছে। তারা যদি হয়রানির সম্মুখিন হয় , সবসময় আশংকার মধ্যে থাকে তাহলে তাদের কর্মক্ষমতাও দক্ষতা বাড়বে কি ভাবে? তাদেরকে সুরক্ষা এবং মর্যাদা দেয়া ছাড়া গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না। যারা শ্রমিক খাটিয়ে মুনাফা করে তারা মালিক ফলে কন্ট্রাকটর একজন মালিক হিসেবে বিবেচিত হবে।

আমরা বললাম, আইএলও কনভেশনই সরকার মালিক মানতে চায় না ফলে শুধু একটা রেকমেন্ডেশন হলে তাকে তো পাত্তাই দেবে না । তাই কনভেনশনের পক্ষে জোড়ালো দাবি করেছি যাতে সরকারের উপর এ বিষয়ে আইন তৈরির জন্য নৈতিক চাপ থাকে ।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশ থেকে শুধু ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক নেতাই আইএলও কনভেনশনে অংশগ্রহণ করে থাকেন । তাই সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন মতামত দেয়ার ক্ষমতা তাদের থাকে না।
এই সেমিনারে শ্রমিক স্বার্থে প্রস্তাব তুলে ধরার জন্য জনমত সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয় ।
( এ ব্যাপারে বিস্তারিত লেখা এবং শ্রীলংকায় কি দেখলাম তা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে)


EmoticonEmoticon