রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭

নিরব পরাজয় (১)

মোঘলদের হেরেম শরীফ কে পবিত্র ভেবে, মোঘলিও শাসন ব্যবস্থায় থাকারত অবস্থাতেই ভারত মাতা ইংরেজদের হাতে ন্যস্ততা বরন করেনেয় কিছু বিশ্বাস ঘাতক বাঙ্গালির লোভনিয়তার কারনে।যা হোক ধীরে ধীরে ইংরেজদের কোম্পানি শাসন থেকে  সরাসরি ইংরেজ পার্লামেন্ট কর্তৃক শাসিত হয় এই ভারতের মাটি। বৃটিশদের কোটচালে হিন্দু-মুসলমান দুই জাতে পরিনত হয়ে পরে অচিরেই এটা প্রমাণিত এই মর্মে যে কলকাতা আলেয়া মাদ্রাসা এবং হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষণ দেখেই। সর্বভারতীয় আন্দোলনের ফলে এবং দ্বীতিয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজ পায়ে দাড়ায় অন্যদিকে জার্মানিরা পরদেশের সহযোগীতা নিয়ে ঘুরে দাড়ায়। এখানে কথা হল ভারত থেকে যখন ইংরেজগণ বিদায় নেবে ঠিক তখনি হিন্দু মুসলমানদের মাঝে এক দ্বি-জাতি তত্বের বীজ বপন করে (এটা অবশ্যই আগে থেকেই করে আসছিল বটে) ফলে ১৯৪০ সালে লাহোরে শের বাংলা এ,কে ফজলুল হক সাহেব তিনি আলী জিন্নার সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম অধ্যাসিত অঞ্চল নিয়ে ভারতে একটি যুক্তরাজ্য গঠিত হবে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নতুন এক রাষ্ট্রের জন্ম হয় পাকিস্থান নামে। যেহেতু পাকিস্তান এর সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিমদের সুরক্ষা করা তাই পূর্ববাংলা এতে করে যথারীতিই পাকিস্থানের পক্ষেই অবস্থান নেয় এবং শ্লোগান তুলে হাত মে বিড়ি মু মে পান লড়কে লেঙ্গে পাকিস্থান। ১৪শ কিলোমিটার এর ব্যবধানে পাকিস্থান নামক এক মুসলিম রাষ্ট্র গঠন হয় যা যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে কিন্তু কিছু দিন পরেই তা হয়ে ওঠে একক রাষ্ট্রে পরিনত।
এতে করে পাকিস্থান রাজনৈতিক মহলে এক বিরাট পরিবর্তন আসে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান রীতি মত একে অপরকে নিজেদের শত্রু ভাবা শুরু করে। পশ্চিম পাকিস্থানিরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মুসলিম বলে পূর্ব পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটানো শুরু করে এই মর্মে যে বাংলা ভাষা এসেছে হিন্দুদের সংস্কৃত ভাষা থেকে এবং বাঙ্গালিরা নিম্নজাতের হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে। এমন কথাও বলেছিল যে পূর্ব পাকিস্থানের মুসলমানরা খৎনা করায় না। এইদিকে আরো একটি কথা বলাই হলনা, দুই পাকিস্থানের দ্বন্দের আরও  এক অন্যতম কারন ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি নারাজ হয় এবং সংখ্যা লঘু ভাষা উর্দুকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা এতে যে আন্দোলন হয়েছিল তা কম বেশী সকলেরই জানার কথা এ নিয়ে বেশীকিছু নাই বা বললাম।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই ইস্কান্দার মির্জার সহযোগীতায় ১৯৫৮ সালে আইউব খান পাকিস্থানে নেমে আসে আরেক নতুন এক মসিবত।যার পতনের জন্য রাজপথে জীবন দিতে হয়েছিল ছাত্র,কৃষক,ও শ্রমিকের।এবং আইয়ুব এর পতনের জন্যে গড়ে ওঠেছিল গণ-অভ্যুথ্যান যা আজও ইতিহাসের পাতায় অবিস্বরনীয় এক ঘটনা বলেই বিবেচিত হয়। এর পর আউয়ুব এর পতন ইয়হিয়া এর শাসন শুরু ভুট্টোর রাজনীতি ১৯৭০ সালের ভয়াবহ বন্যা লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর প্রাণহানি,শাসকের মুখে মুচকি হাসি বাঙ্গালীর মরাতে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত হবে কারন বাঙ্গালী ভোট কমেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামিলীগের জয় এখন পাকিস্থানের শাসন ভার বাঙ্গালির উপর ন্যাস্ত হবে এটা মাত্র সময়ের ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না।
বাঙ্গালিকে পাকিস্থানের শাসনভার দেওয়া হবে না এমন চিন্তা চেতনা ধারন করেই ইয়াহিয়া আর ভূট্টোর নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এতে করে পূর্ব পাকিস্থানিদের মাঝে আন্দোলনের উল্কা জ্বলে ওঠে।বাঙ্গালি নিধনের জন্য ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামক এক মিশন নামিয়ে শুরু করে বাঙ্গালি নিধন।

এতে করে পাকিস্থানে শুরু হয় এক যুদ্ধ নিলা যার ফলে পাকিস্থান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্থান বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম লাভ করে(দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে) হিন্দু,মুসলমান,বৌদ্ধ,খৃষ্টান সহ আস্তিক-নাস্তিক একত্রিত হয়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এক অসম্প্রদায়িকতার স্লোগান দিয়ে। পাকিস্তান নিজেদের অস্থিত্ব বজায় রাখতে পারেনি মক্কা মদিনা এর দুহাই দিয়েও। এতে আরও প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এক অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মধ্যে দিয়েই। কিন্তু আজ বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় তা বলার মত কি আছে আর কি বলব তাই ভাবছি ! 
                           চলবে..


EmoticonEmoticon