শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭

মার্ক্সবাদী শিবিরে...

মার্ক্সবাদী শিবিরে মার্ক্সবাদ-বিরোধী শোধনবাদী ধারা গজিয়েছে তার একাধিক লক্ষণ ১৮৯৬-৯৭ সালে দেখা গেলেও শোধনবাদের প্রথম স্পষ্ট আত্মপ্রকাশ ঘটল ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে।জার্মান সোশ্যাল-ডেমোক্রেট পার্টির মুখপত্র Die Neue zeit পত্রিকায় বার্ণস্টাইন কয়েকটি স্পষ্টতঃ শোধনবাদি প্রবন্ধ ছাপা শুরু হলো ঐ সময়।১৮৯৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে এঙ্গেলসের মৃত্যু হয়।এক বছর যেতে না যেতেই মার্ক্স-এঙ্গেলসের অবর্তমানে ব্রিটিশ ফেবিয়ান সোসাইটির প্রধান প্রবক্তা বার্ণস্টেইনের প্রভাব বাড়তে থাকে।
জার্মান পার্টি পত্রিকায় বার্নস্টেইনের এই প্রবন্ধগুলো দেখে প্লেখানভ দারুণ বিস্মিত ও  ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন।জার্মান মার্ক্সবাদী পত্রিকায় এই প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে, অথচ রোজা লুক্সেমবুর্গ, পার্ভাস
প্রভৃতি তরুণ মার্ক্সবাদীরা ছাড়া জার্মান পার্টি নেতারা কেউ প্রতিবাদ করছে না! এমনকি পত্রিকার সম্পাদক কাউটস্কিও কোন মন্তব্য করছে না!  কেউ বলছে না যে বার্ণস্টাইনের বক্তব্য  পার্টির বক্তব্য নয়- এসব দেখে প্লেখানভ অধীর হয়ে উঠছিলেন। প্লেখানভ কাউটস্কি থেকে জানতে চায়লেন-"এও কি হতে পারে যে আপনি বার্নস্টেইনের সাথে একমত? যদি তা না হয়, তাহলে এর উত্তর দিচ্ছেন না কেন?... আমার সঙ্গে একমত হবেন কি না জানি না, কিন্তু Die Neue Zit পত্রিকায় বার্ণস্টেইনের জবাবে আমাকে লিখতে দিন।" প্লেখানভ জার্মান পার্টির সদস্য নন, তাই সরাসরি এই বিতর্কে তাঁর অংশগ্রহণ করা নিয়ে তাঁর দ্বিধা ছিল।
কাউটস্কির সাথে বার্ণস্টেইনের বন্ধুত্ব সর্ম্পক প্রায় ১৮ বছরের,তাই সরাসরিভাবে তিনি নিজে এর বিরোধ করে নি,তবে প্লেখানভকে লেখার সুযোগ দিতে আপত্তি ও করে নি।
১৮৯৮ সালের আগস্ট মাসে প্লেখানভের লেখা ছাপা হলো পত্রিকাটিতে। কার্ল লিবনেকট, রোজা, প্লেখানভকে সোৎসাহ সমর্থন দিলেন। ১৮৯৮ সালের অক্টোবর মাসে স্টুটগার্টের সম্মেলনে বার্নস্টেইন পার্টির কার্যসূচী পরিবর্তন করে শোধনবাদী-সংস্কারবাদী কার্যসূচীর সরাসরি প্রস্তাব পাঠান।অবশ্য এই প্রস্তাব গৃহীত হয় নি এবং সম্মেলনে বার্ণস্টেইনের  প্রস্তাবের নিন্দা করা হয়। আত্মসমর্পণ করে কাউটস্কি  বললো- "বার্নস্টেইন আমাদের পুনরায় চিন্তা করতে বাধ্য করেছে, সেজন্য তার কাছে আমাদদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।" তাকে ভৎসর্না করে সে সময় প্লেখানভ আবারো লিখলেন- " প্রশ্ন হচ্ছে কে কাকে কবর দিবে? বার্ণস্টেইন মার্কসবাদকে নাকি মার্ক্সবাদ বার্ণস্টেইনকে কবর দিবে?"
শোধনবাদের বিরুদ্ধে প্লেখানভের লেখাগুলো বের হচ্ছিলো জার্মান ভাষায়।সেই লেখাগুলোর ও দার্শনিক দিকটার উপরই তিনি বেশি জোর দিচ্ছিলেন।ফলে রাশিয়ার সাধারণ কর্মী ও সদস্যদের কাছে তা মোটেই বোধগম্য হচ্ছিল না। বলাবাহুল্য, জার্মান ভাষায় প্লেখানভের এসব পান্ডিত্যপূর্ণ দুরুহ রচনা রাশিয়ায় মার্ক্সবাদী কর্মীদের আকর্ষণ না করে বিরুপতাই তৈরী করছিলো। আসল কাজের সাথে সঙ্গতিহীন, অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব বলে অনেকে  ভাবতেন। অন্যরা যখন এই ভাবছে তখন  একজন মানুষ সেই সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে বন্দি জীবন যাপন করতে করতেও এসব রচনার যতটা পাচ্ছিলেন, গভীর আগ্রহে তা পড়চ্ছিলেন। মানুষটি জানতো প্লেখানভের এই রচনাগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।পরবর্তী সময়ে শোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আকর সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি প্লেখানভের এই লেখাগুলো থেকে।
সেই মানুষটি আর কেউ নন-
রাশিয়ার বিপ্লবের স্রষ্টা -
কমরেড লেনিন!
#সহায়ক পাঠ-
রুশ বিপ্লবের প্রস্তুতিঃ জ্যোতি ভট্টাচার্য।


EmoticonEmoticon