রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৭

মৃত্যুবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা ...

"তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের অন্ত নাই "  শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে ।
বাঙালি এবং মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের কত যে ঋণ তার কাছে !
গতিময় বাংলা ভাষা, ভাব প্রকাশের অপুর্ব ক্ষমতা, পরিমিতি এবং বিস্তৃতির মাত্রা কেমন তা তিনি দেখিয়েছেন তার সৃষ্টিকর্মে ।
মানুষকে যে মানুষ হয়ে উঠতে হয় এবং সে ক্ষেত্রে জীবনের আঘাতগুলো যে কত বড় শিক্ষা তা তিনি তার জীবন ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন । কবি সাহিত্যিকরা যে ভিন্ন জগতের কেউ নন সমাজের ভাল মন্দের সাথেই যে তারা জড়িয়ে থাকেন তা দেখিয়েছেন তার কর্মে ।
ছোট হওয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়ে পুর্ন হবার আনন্দ পেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি । লিখেছেন -
"ও জোনাকী,         কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ।
          আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ॥
তুমি   নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র,   তোমার   তাই ব'লে কি কম আনন্দ।
     তুমি    আপন জীবন পূর্ণ ক'রে আপন আলো জ্বেলেছ॥
তোমার   যা আছে তা তোমার আছে,   তুমি   নও গো ঋণী কারো কাছে,
     তোমার   অন্তরে যে শক্তি আছে তারি আদেশ পেলেছ।
তুমি   আঁধার-বাঁধন ছাড়িয়ে ওঠ,   তুমি   ছোটো হয়ে নও গো ছোটো,
          জগতে   যেথায় যত আলো সবায় আপন ক'রে ফেলেছ॥"
অপমান -অপবাদ - নিন্দা যেন কর্তব্য ভুলিয়ে না দেয় , নিজের কাজ সম্পন্ন করার শক্তি দিতে লিখেছেন -
"তোরে সবে নিন্দা করে গুণহীন ফুল'
শুনিয়া নীরবে হাসি কহিল শিমূল,
যতক্ষণ নিন্দা করে, আমি চুপে চুপে
ফুটে উঠি আপনার পরিপূর্ণ রূপে।"
অযোগ্য লোকেরাও বড় মানুষদেরকে উপহাস করে । তাতে যেন হতোদ্যম না হয়ে পড়ি তাই তিনি লিখেছেন-
"নক্ষত্র খসিল দেখি দীপ মরে হেসে।
বলে, এত ধুমধাম, এই হল শেষে!
রাত্রি বলে, হেসে নাও, বলে নাও সুখে,
যতক্ষণ তেলটুকু নাহি যায় চুকে।"
সত্য প্রতিষ্ঠায় নাকি শৃংখলা অপ্রয়োজনীয় , এ কথা এখন বহুল প্রচলিত । কিন্তু তিনি বলেছেন, শৃংখলা ছাড়া সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না । সত্য এবং শৃংখলার অপুর্ব সমন্বয় দেখাতে লিখছেন -
"স্বপ্ন কহে, আমি মুক্ত, নিয়মের পিছে
নাহি চলি। সত্য কহে, তাই তুমি মিছে।
স্বপ্ন কয়, তুমি বদ্ধ অনন্ত শৃঙ্খলে।
সত্য কয়, তাই মোরে সত্য সবে বলে।"
যাদের লোভের বলি আজ প্রকৃতি, মানুষের সব মহৎ অর্জন তারা কি আমাদের ভালবাসা পেতে পারে ? যারা সব লুট করে টাকার থলি পুর্ন করছে , জনগন কি তাদের ভোটের ঝুলি পুর্ন করার কাজ করে যাবে ?
প্রশ্ন তুলেছেন তাই -
"যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু , নিভাইছে তব আলো
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো ? "
ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া নয়, আশংকা আর অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পন নয় , শেষ পর্যন্ত লড়ো ! এ আহবান ছিল তার -
"তবু বিহঙ্গ , ওরে বিহঙ্গ মোর
এখনি অন্ধ বন্ধ কোরনা পাখা ! "
তাকে যেমন জানতে হবে তেমনি তাকে অতিক্রম করতে হবে , তবেই তাকে সত্যিকারভাবে শ্রদ্ধা জানানো যাবে । তার  মৃত্যুদিনে তাই বলতে ইচ্ছা হয় -
পুরনো যা কিছু ছেড়ে দিয়ে সব
যাব বহুদূর চলে,
তোমার কাছে ফিরি বারবার
দুরে যেতে চাই বলে ।


EmoticonEmoticon