সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

দেশটাকে চরমভাবে লুটপাটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে ।

কিছুদিন আগে একটি স্লোগান শুনতাম খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। ষোলকোটি বিশাল জনসংখ্যার দেশ, চাল বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। কত ভোগাস আর ফানুস স্লোগান এগুলো তা ছোট একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রমাণ হয়ে গেছে। একটি দেশ তখনই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায় যখন সে তার সংকটকালীন সময় খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারে। কিন্তু আগাম বন্যায় বোরো ধানের ফসল ঠিকমত উঠতে না পারার ফলে যে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা পূরণ করতে রাষ্ট্রক্ষমতায় অসীন রাজনীতিবিদরা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ এদের পরিকল্পণার ঘাটতি, বাজার ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, অবাধ দুর্নীতি এবং বিকল্প খাদ্য সরবরাহের পরিকল্পণা না থাকার ফল এই খাদ্য সংকট। যায় ফলে চালের বাজার চড়া হচ্ছে দিনের পর দিন। প্রতিকেজি চাল ৬০-৭০ টাকা দরে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত চালের দাম উর্দ্বোমূখী থাকবে। যদি আগামী বোরো ধানের ফসল ঠিকমত আবাদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল তোলা যায় তবেই চালের বাজার স্থিতিশীল হতে পারে! আসলেই একটি বিপদ সংকেত এই দেশের মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত খেটেখাওয়া মানুষের উপর যারা প্রধান খাবার হিসেবে ভাতের উপর নির্ভরশীল।

এই দেশকে নিয়ে চরমভাবে লুটপাটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে এখানকার শ্রমজীবী জনগণকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে। কিন্তু যারা ক্ষমতায় বা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন তাঁদের কোন অসুবিধা হবে না। চরম সংকটে ভোগবে নিম্নবৃত্তের গরীব মানুষগুলো যারা এই দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। আমি বুঝতে পারি আজ যারা চাকুরীজীবী এবং একজনের আয়ের উপর নির্ভর করে বাঁচতে হয় তাঁদের কী ভোগান্তি পোহাতে হয়। সাধারণ বিশ ত্রিশ হাজার বেতনের চাকরী দিয়ে এখন সংসার টেনে চলা মুশকিল। কিন্তু ঠিক কয়েকবছর আগে পাঁচহাজার আয় করে একটি সংসার দিব্যি চলছে। এর কারণ হল টাকার মুদ্রাস্ফীতি। বাজারে টাকার আস্ফালন বারলেও জিনিসের সরবরাহ সেই তুলনায় বাড়ে নাই। আবার পুরো বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট পুঁজির মালিকগণ। এজন্য যতই মজুরী বাড়ুক তা কেড়ে নেওয়ার কৌশল তাঁদের হাতেই। আপনি ঠিক জায়গামত ব্যবহৃত হচ্ছেন। এজন্য মার্ক্স শুধু মজুরী বৃদ্ধির উপর নির্ভর হয়ে থাকতে চান নি। বরং মজুরী ব্যবস্থা বন্ধ করে বাজারটাকে জনগণের হাতে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বড় বড় পুঁজিপতি এবং সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীগুলো। আপনি আখেরে এই ব্যবস্থার একটি গোলাম ছাড়া কিছুই নয়। শুধুমাত্র গণবিদ্রোহ দমণ করতে সামান্য সুযোগ সুবিধা কাউকে দেওয়া হয় কিন্তু দুর্ভোগ ঠিক মাস পিপল এর।

আরও একটি বড় সংকট হল শুধুমাত্র খাবার হিসেবে ভাতের উপর একতরফা নির্ভর করা। কিন্তু বিকল্প খাদ্য হিসেবে ভাতের চেয়ে বেশি ক্যালরির খাবার নিয়ে গবেষণা করা যেত। যা কম ব্যয় সাপেক্ষ এবং সহজলভ্য। আমাদের দেশে আলুর ফলন ভাল এবং কোন কোন সময় আলুর দাম এত কমে আসে যে কৃষক কে দেখা যায় আলু রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু এই আলু সরকারী উদ্যোগে সংগ্রহ করে বিকল্প খাদ্যের যোগান দেওয়া যেত। খাদ্য হিসেবে পাস্তা ভাতের চেয়ে কম ব্যয় সাপেক্ষ। কারণ পাস্তার জন্য দরকার একটি তরকারী জাতীয় জিনিসের আয়োজন যেখানে ভাতের লাগে একাধিক তরকারী। ফলে ভাতের চেয়ে পাস্তার খরছ কম। কিন্তু এসব নিয়ে আন্তরিকভাবে পরিকল্পণা করতে পারে শুধুমাত্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি পরিচালনা ব্যবস্থা যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ মূখ্য থাকবে। কিন্তু যারা ক্ষমতায় আছে এরা কি এই প্রতিনিধিত্ব করে?


EmoticonEmoticon