রিক্সাভাড়া ৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা হয়েছে, নিশ্চিতভাবেই রিক্সাওয়ালাদের আয় বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা, সেই সাথে বেড়েছে রিক্সা ড্রাইভারের সংখ্যাও। আগে ১০০ টাকার যাত্রী ৫ জনের ভাগে পড়লেও এখন তা ২০ জনকে ভাগ করে নিতে হচ্ছে। আপনার বাসার কাজের বুয়ার বেতন ২০০০ টাকা। আগে ৫০০ টাকা দিতেন, এখন চার গুণ দিচ্ছেন। এ কথা ভুলে যাবেন না, একটা মেয়ে/মহিলা কমপক্ষে তিনটা বাসায় কাজ করে ৬০০০ টাকা পেলে এতেও তার পরিবার চলেনা। আগে ১০ টাকা দিয়ে চাল কিনতো, এখন কিনে ৫০ টাকা দিয়ে। বর্তমানের ৭০ টাকার কথা বাদই দিলাম। উপজেলা সদর হতে আমার বাড়ির দূরত্ব ২ কি.মি। ইজিবাইকের ভাড়া ৫ টাকা। আগে এখানে ইজিবাইক ছিল ২০ টা, এখন সেখানে ১৩৭ টা। ২০ টার আয় এখন ১৩৭ টাতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। চা বাগানের ৮৫ টাকার রেশন কেঁটেকুটে ৫৫ টাকার কথা বাদ দিলাম। আমার এখানে এখনো ১৫০ টাকায় কামলার রোজ পাওয়া যায়। বাড়ির সামনেই ইটের ভাটা। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের দৈনিক আয় ২০০/২৫০ টাকার ও কম। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেশিরভাগের বেতন ৫৫০০ টাকা। ১২ ঘন্টা ডিউটি করলে ৪ ঘন্টা ওভারটাইম ধরে বেতন আসে সাকুল্যে ৮০০০ টাকা। যেসব খুঁপড়ি ঘর/বাসাবাড়ির এক রুমে শেয়ারিং কিচেন/বাথরুম সহ তারা বসবাস করে তার ভাড়া ৪০০০ হাজার টাকার কম নয়। এখন বলুন, ৮০০০ টাকা বেতন পেয়ে ৪০০০ টাকা ভাড়ায় চলে গেলে সে বাকি টাকায় কত কেজি চাল কিনবে? চাল কিনলেই হবে? আনাজ/তরকারি/লবন/মরিচ/সাবান লাগবেনা? মাছ/মাংশ? বাদ দিন। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে/বেড়েছে তাদের ঘুষের টাকা। উকিল/মোক্তারের ফিস বেড়েছে/ডাক্তারের ভিজিট বেড়েছে। সাধারণ মানুষের আয় কি বেড়েছে? হ্যা বেড়েছে। ৫ টাকার ভাড়া এখন আপনি ২০ টাকায় যান। কাজের বুয়াকে ৫০০ টাকার বদলে এখন ২০০০ টাকা দেন। কিন্তু তার আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি কি ঠিক রয়েছে? আগে আয় ছিল কম ব্যয় ও ছিল কম। এখন ২ টাকা আয় বাড়লে ব্যয় বেড়েছে ১০ টাকা! আপনি কোটিপতি মানুষ! দলান্ধ ও হতে পারেন। ৭০ কেন ৭০০ টাকা চালের কেজি হলেও আপনার কিছু আসে যায়না। চালের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিবাদ না করে ইনিয়ে বিনিয়ে বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দাড় করাতেও পারেন। নাজিরশাইল/পাইজাম চাল ছাড়া আপনার মুখে ভাত রুঁচেনা! কিনতেও অসুবিধে হয়না। কিন্তু সাধারণ জনতা এখন মোটা চালের ভাতের স্বাদ ও ভুলতে শুরু করেছে মাননীয় স্পিকার! বিএনপি আমলের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব ভাতের বদলে ফুলকপি খাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের কোন এক মন্ত্রী বলেছিলেন, ভাতের বদলে আলু খান, ভাতের উপর চাঁপ কমান!
মাননীয় স্পিকার,
ফুলকপি সিজনাল সবজি। দেশী আলুর বাজার চড়া। ২৫ টাকা কেজি ললিতা আলু খেয়ে কোন রকমে দিন পার করা যাচ্ছে। মাছে ভাতে বাঙালি স্লোগান পরিবর্তন করে এখন তাই বলা যায়, আলু ভাতে বাঙালি।
দুদিন পরে যদি লুঁটেরাদের খাঁই মেটাতে ললিতা আলুর গুদামেও ইদুর ঢুকে পড়ে, তখন বাঙালিকে কি খেতে পরামর্শ দেয়া হবে, মাটি? তখন তো মাটি ভাতে বাঙালিও বলা যাবেনা! কারণ ভাত হয়ে যাবে বিলুপ্ত! তখন সমস্ত স্লোগান বাদ দিয়ে কি বলা হবে না, মাটি খেঁকো বাঙালি?
EmoticonEmoticon