পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হল ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা । এখন তা যে উপায়ে হোক। চুরি করে, চৌর্যবৃত্তি করে অথবা ক্ষমতার ব্যবহার করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে যে এইসব চর্চা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে ব্যাপারটা তা নয়। যেখানে গোটা সমাজ কলুষিত দুর্নীতি পরায়ণ সেখানে সৎ ভাল মানুষ খোঁজে পেতে দুরবিন লাগবে। তবে বাংলাদেশে অন্যান্য সেক্টর থেকে তুলনামূলক শিক্ষকরা সৎ এবং সাহসী ছিলেন তার একটা প্রচার ছিল। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দলীয় চৌর্যবৃত্তি এবং মেধা এবং যৌগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের বিপরীতে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন বেশিরভাগ। ফলে প্রকৃত মেধাবী বা সৎ লোকের জায়গা সেখানে কম হয়েছে।
টিভি সাংবাদিক এবং ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমান ও আরেকজন শিক্ষকের নামে মিশেল ফুকোর লেখা চুরির অভিযোগ উঠেছে। একটি গবেষণা প্রবন্ধে এই কাজটি তাঁরা করেছেন। দেখুন, গবেষণা প্রবন্ধ একটি ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং মেধা প্রকাশের এমন পরিচায়ক যে যেখানে অন্যের কাছ থেকে ভাব বা কোটেশন সংগ্রহ করা যায়। তা অবশ্যই নিজ লেখার থেকে কোন অংশেই বড় হতে পারবে না এবং নির্দিষ্ট কোটেশন সহকারে লেখকের নাম উল্লেখ করতে হবে। তা না করে হুবহু কপি পেষ্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিলাম। তাও সাধারণ লেখা নয় গবেষণা প্রবন্ধ যা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। মিশেল ফুকোর মত একজন পরিচিত দার্শনিকের লেখা এইভাবে চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া মূর্খতার পরিচয় ছাড়া কিছুই নয়।
আমরা অনেক সময় কমিউনিজম এর বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বক্তব্যগুলো ভাবগতভাবে মার্ক্স এঙ্গেলস বা লেনিনের সাথে মিলে যায়। কিন্তু সেখানে ভাষা এবং শব্দের পার্থক্য থাকবে। আর কমিউনিজমে মার্ক্স এমন জায়গা করে নিয়েছেন যে মূল সারবস্তু মার্ক্সের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। মার্ক্স ও তাই করেছেন। সমসাময়িক দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে নিয়েছেন এবং তাঁদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এগিয়ে নিয়েছেন। এটা হল সমাজ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তাকে বিকশিত করা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের এই অবস্থা কেন? তার মূলে রয়েছে প্রচলিত বাজার অর্থনীতির দুর্নীতি পরায়ণ রাজনীতি এবং তার মধ্য দিয়ে যে চর্চা বা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার ফল। এইসব চর্চা এই দেশকে মেধাশূণ্য এবং ধ্বংশের আয়োজন ছাড়া কিছুই নয়। তবে হ্যাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইচারজন সংগ্রামী মানুষ আছেন যারা পেশার বাইরেও দেশ সমাজ নিয়ে ভাবেন। অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ সহ হাতেগনা দু-চারজন শিক্ষক এখনো আশা বাঁচিয়ে রাখেন পথ চলতে সাহস যোগান।
EmoticonEmoticon