বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধাসন্তান - নাতিনাতনিদের কোটা বাতিলের পক্ষে

"একজন রাজাকার সারাজীবনই রাজাকার,কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয়''। অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ স্যারের এই বাক্যটি কোটিবার সত্যি বলে  প্রমাণিত হয়েছে একাত্তর থেকে এই দুই হাজার আঠারোর বাংলাদেশে। আরো গভীরভাবে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন মুক্তিযোদ্ধা তো থাকতেই পারেনি, বেঈমান বা গাদ্দারে পরিণত হয়েছে।

যেমন, গোটা ৭৫ জুড়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের মিরজাফরী খেইল বাংলাদেশ দেখেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্থানের পিছনে ছিলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই, কুখ্যাত মীর কাশেমের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে ডেভিড বার্গম্যান এর পক্ষে দাঁড়িয়ে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গেছে, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার নোংরা রাজনীতিতে সাঁতার কেটে রাজাকারদের সাথে হাত মিলিয়ে ভোট বাক্স হাতিয়েছেনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে বসে টেবিল টক করেছেন, ষড়যন্ত্রে শরিক ছিলেন এককালের কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধারা  ।

ফর্মুলা অনুসারে, টেন্ডার ব্যবসার একচ্ছত্র আধিপত্য বাংলাদেশে থাকে সেই রাজনৈতিক দলের  যারা সরকারে থাকে, ঠিক তেমনি বাটাবাটি হয়েছে, হচ্ছে, বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি - সনদ ও ভাতা। তাছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি সনদ বা ভাতা প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধারই জোটেনি, সনদ না পেয়ে আত্মহত্যাও করেছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা, অনেকে ধুঁকে ধুঁকে রাস্তায় শেষ নিঃশ্বাস ফেলার পর পত্রিকার মাধ্যমে লোকে জেনেছে লোকটা বা অমুক মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো ভোরের সূচনাতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে স্বামীহারা সম্ভ্রমহারা  বৃদ্ধ বিধবাদের অস্পষ্ট মিছিল, তারা বেরিয়ে পড়েছে কাজের সন্ধানে ।

জনযুদ্ধ সংঘটনের সময়ে আপামর জনগণকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ এবং অবর্ণনীয় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, জনযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না, সব ধরণের জনগণই এ যুদ্ধে কোনো না কোনো ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জামাতি ইসলামী - আলবদর আলশামস রাজাকার - শান্তি বাহিনী ও মননে পাকিস্তানী ২৫ ভাগ টোটাল দালাল ছাড়া বাকি সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অংশ নিয়েছিল, তরুণ-যুবক, আবালবৃদ্ধবনিতা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে নির্ভয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ নির্মমতা সত্ত্বেও বাঙালি বীর জনতা সাহস জুগিয়েছে।  নচেৎ পশ্চিম পাকিস্তান, একটি নিয়মিত সেনাবাহিনী  এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলি, আমেরিকা, চীনের প্রত্যক্ষ মদদের বিরুদ্ধে আমরা ভূখণ্ড পেতামনা।

একাত্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ, যারা ভারতে যাওয়ার সুযোগ সময় পায়নি,  সম্মুখ সমরে ছিলোনা, কিন্তু হয়েছে গণহত্যা ও গণধর্ষণের বলি।

সরকারের কাছে দাবি, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এবং নাতি-নাত্নীদের জন্য চাকুরী কোটা প্রথা এবং রাষ্ট্রীয় নানান বিশেষ সুযোগ সুবিধা বাতিল করে, কোটা প্রথা ও সুযোগ সুবিধার বিস্তৃতি বাড়ানো হোক মানসিক
ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, উপজাতি ও পাহাড়ি জনপদের মানুষ, নারী এবং অমুসলিমদের জন্যে ।


EmoticonEmoticon