সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট পার্টি জন্মের পর থেকে পঞ্চ নদ আর হিমালয় থেকে কম জল গড়িয়ে সাগরে পড়েনি, কেবল এই অঞ্চলে সামন্ত, বুর্জোয়া, ধর্মাশ্রয়ী শাসকশ্রেণির অনিঃশেষ শোষণ থেকে মানুষকে মুক্ত করা যায়নি। প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশরাজ খেদাতে পারলেও ভারতবাসী স্বজাতির লুটেরা-শোষক-নিপীড়কদের হঠাতে পারেনি।
একজনই শুধু পেরেছিলেন সাময়ীক সময়ের জন্য। তিনিই সর্বপ্রথম ভারতবর্ষের আজন্ম নিপীড়িত-শোষিত ভূমিহীন কৃষককে জমির মালিকানার স্বাদ দিয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য পশ্চিবঙ্গের কিছু অঞ্চলের ভূমিহীনরা ভূমির মালিকানা পেয়েছিল। নিজ ভূমিতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে মানুষটির জন্য, তিনি চারু মজুমদার। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর প্রতিষ্ঠাতা। নেতা-কর্মীরা যাকে আপন করে ‘চারুদা’ বলে ডাকতেন। এত বছর পরও যিনি ভারতের তথা এই অঞ্চলের কমিউনিস্ট বিপ্লবের অথোরিটি।
 
উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের আর এমন একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার নাম করা যাবে না যিনি শত্রুর হাতে বিপ্লবের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। মুজফ্ফর আহমেদ নন, ডাঙ্গে, রণদিভে, অজয় ঘোষ, রাজেশ্বর রাও, নাম্বুদ্রিপাদ কেউই নন। চারু মজুমদারই ছিলেন প্রথম শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা যিনি কারার ঐ লৌহ কপাটের অন্তরালেও নয়, খোদ পুলিশ প্রসাশনের হেড কোয়ার্টার্সেই প্রাণ দিয়েছেন ২৮ শে জুলাই ১৯৭২ সালে। ধরা পড়ার মাত্র এগার দিনের মাথায়। মারা যাওয়ার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর। আরও ২০ বছর বাঁচলে কী হতে পারত আমর
আজ ১৪ মে তাঁর জন্মদিন। যে মানুষটি কার্ডিয়াক অ্যাজমা নিয়ে প্রায়শই মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া অবস্থায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পেথিড্রিন ইঞ্জেকশনসহ দু:সহ আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন কাটিয়েছেন ৩টি বছর!
এই ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিকগুলো আলোচনা আমাদের সাধ্যের মধ্যেই সীমিত। টলস্টয়ের কথায় ‘জীবন শিল্পের চেয়ে মহান’। এতবড় মাপের মানুষ , যিনি একটা ঐতিহাসিক সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, তাঁকে সামগ্রিক উপলব্ধি নিয়ে অনুধাবন করতে গেলে যে দক্ষতা ও সময় প্রয়োজন ছিল তার অধিকারী আমরা ছিলাম না। তবে আশা এইটুকু যে, মুক্ত ভারতের তথা মুক্ত উপমহাদেশের যে স্বপ্ন তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা দেখেছিলেন তাকে সফল করতে হলে অনেক কাজের মধ্যে চারু মজুমদারকে উপলব্ধির স্তরকে উন্নত করাটাও একটা কাজ,
আশার কথা এই বোধ ক্রমশঃ সঞ্চারিত হচ্ছে। আর তাঁকে জানা মানেই তাঁর দুর্দমনীয় স্পিরিট ও প্রাসঙ্গিকতা বোঝা।
বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ খ্যাত মহান নকশালবাড়ি কৃষক সংগ্রামের রূপকার, বর্ণচোরা সংশোধোনবাদী-নয়াসংশোধোনবাদীদের কবর রচনাকারী এবং শ্রেণীসংগ্রামের উচ্চতর রূপের প্রবক্তা ও প্রয়োগবিদ এবং ভারতবর্ষের বিপ্লবের অথোরিটি মহান নেতা কমরেড চারু মজুমদার লাল সালাম।


EmoticonEmoticon