আইজেনস্টাইনের পটেমকিন সিনেমাটি নির্মিত হওয়ার পর শুধু যে চলচ্চিত্র মহল কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নেই সাড়া ফেলেছিল তা নয়,এর প্রভাব পড়ে খোদ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে।হিটলার জার্মানিতে ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ,তাদের আশংকা ছিলো- যারা এই ছবিটি দেখবে তাদের উপর সোভিয়েত ও মার্ক্সবাদের প্রভাব বাড়বে এবং জার্মান জনগণ কম্যুনিজমের দিকে ঝুঁকে পড়বে।এতেই বোঝা যায়-শিল্প মাধ্যম হিসেবে সোভিয়েত সিনেমার আদর্শিক শক্তি ও বিশ্বমান। আজ সারা পৃথিবীতেই ফিল্ম স্কুলগুলোতে এই সিনেমাটি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি হিসেবে রাখা হয়।
সোভিয়েত সিনেমার মৌলিকত্ব ও কারিগরি অভিনবত্ব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আরেকজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হলেন পুদভকিন।পুরো নাম সেভলদ ইনারিয়োভিচ।আইজেনস্টাইনের মতই সিনেমায় মন্তাজ ব্যবহারের সাথে সাথে বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক প্রাধান্য দিয়ে ছবি তৈরী করতে থাকেন।নিতান্তই দিনমজুর ঘরে জন্ম নেয়া পুদভকিন ছিলেন একজন রসায়নবিদ, বিপ্লবের পরে লেভ কুলেশভের স্টুডিওতে কাজ শিখেন।পুদভকিনই প্রথম দেখান-পেশাদার অভিনেতাদের পরিবর্তে কিভাবে সংঘবদ্ধ জনতাকে দিয়েও অভিনয় করানো যায়।Death Ray ছবিতে পুদভকিন অভিনেতাদের শ্রমিক না সাজিয়ে আসল শ্রমিকদের নিয়েই কাজ করেন।১৯২৮ সালে সবাক চলচ্চিত্র শুরু হয়।এই সময় মন্তাজের ফ্লুইডিটি,ক্রসকাটিং,ইমেজারি নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন পুদদভকিন।কমেডি প্রধান ছবি Chess fever(১৯২৫) তাঁর প্রথম ছবি হলেও ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত 'Mother(১৯২৬)' ছবিটি পুদভকিনকে চলচ্চিত্র জগতে সামনের কাতারে নিয়ে আসে।
চলচ্চিত্রে শ্রেণিচেতনা নির্মাণের এই পরিচালককে 'সোশালিস্ট রিয়েলিজম'য়ের প্রবক্তা হিসেবে ধরা হয়।সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরেন বলশেভিক আদর্শ। 'The end of St. petersberg (1927), storm of asia তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি। শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হওয়ার আহবানে 'মা' ছবিতে ব্যবহৃত 'মোরগের ডাক' শর্টটি তৈরী করে শ্রমিকমুক্তির লড়াইয়ের প্রস্তুতির সিম্বলিক হিসেবে।মহান অক্টোবর বিপ্লবের পটভূমিতে আইজেনস্টাইনের ' অক্টোবর' ছবিতে দেখানো হয়- একটা সেতু ভেঙ্গে যাওয়ার মাধ্যমে বুর্জোয়া কেরেনস্কি সরকার কিভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে কিংবা জার রাজত্বেরর পতন ঘটছে একটা 'সাদা রাজকীয় ঘোড়া' সেই সেতু দিয়ে ধীরে ধীরে নিচে পড়ে যাওয়ার দৃশ্যায়নের ভেতর দিয়ে।
সোভিয়েত চলচ্চিত্র সম্পর্কে বুর্জোয়া শিল্পের অভিযোগ - এ বড্ড বেশি প্রচারধর্মী! শিল্পীর স্বীয় সত্ত্বাকে কেড়ে নেয় রাষ্ট্রীয় প্রেসক্রিপশনে! কিংবা বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রোপাগান্ডা হয় সত্যিকার শিল্প হয় না!! ইত্যাদি! এই অভিযোগগুলোর সারবত্তা যাই হোক বিষয়টা বুঝতে হলে একদিকে যেমন সোভিয়েত সমাজের বাস্তবতা বোঝা দরকার তেমনি বুর্জোয়া দৃষ্টিভঙ্গীর অসারতাও জানাটা প্রয়োজনীয়।
বিপ্লবের পর সদ্য ভূমিষ্ট এই নতুন শ্রমিক রাষ্ট্রটিকে পড়তে হয় সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের মুখে।পুরানো সমাজের অভ্যন্তরে ক্ষমতা হারানো কুলাকরা সহ জার আমলের যে সকল সামন্তচক্র, আমলতন্ত্র ছিলো তারাও সামিল ছিলো এই আক্রমণে।সোভিয়েতকে এই দুইমুখী আক্রমণের পাশাপাশি জনগণকে যুক্ত করে অর্থনৈতিক উৎপাদন বিনির্মাণের কাজটাও করতে হয়।সে সময় সোভিয়েত রাষ্ট্র ছিলো সম্পূর্ণ একা,পাশে দাড়ঁনোর মতন কোন শক্তিই ছিলো না।রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্যারি কমিউনের( ফ্রান্স ১৮৭১) অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।অন্যদিকে জনগনের মাঝেও রয়েছে হাজার বছরের পুরানো সংস্কার,চিন্তা,অভ্যেস- রীতিনীতি। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রেও ছিলো নানা জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। ফলে এই নতুন পরিস্থিতি, গৃহযুদ্ধ,শত্রুর আক্রমণ -এসবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিলো খুবই জটিল ও দূরহ কঠিন কাজ।যা এর আগে কোন রাষ্ট্রকেই করতে হয় নি।শুধু বুর্জোয়া সমাজই নয়,পূর্বতন সকল সমাজের চিন্তা ও সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক নিয়মাদি পাল্টানোর সংগ্রামের ভিতর দিয়েই সোভিয়েত তথা শ্রমিকশ্রেণিকে এগুতে হয়।এখানে দ্বন্দ্বটা শ্রেণির সাথে শ্রেণির;ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার নয়।সামাজিক স্বার্থের সাথে ব্যক্তি স্বার্থের।আর এই পরিস্থিতিতেই সোভিয়েত সিনেমা।
বিপ্লবের পর সদ্য ভূমিষ্ট এই নতুন শ্রমিক রাষ্ট্রটিকে পড়তে হয় সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের মুখে।পুরানো সমাজের অভ্যন্তরে ক্ষমতা হারানো কুলাকরা সহ জার আমলের যে সকল সামন্তচক্র, আমলতন্ত্র ছিলো তারাও সামিল ছিলো এই আক্রমণে।সোভিয়েতকে এই দুইমুখী আক্রমণের পাশাপাশি জনগণকে যুক্ত করে অর্থনৈতিক উৎপাদন বিনির্মাণের কাজটাও করতে হয়।সে সময় সোভিয়েত রাষ্ট্র ছিলো সম্পূর্ণ একা,পাশে দাড়ঁনোর মতন কোন শক্তিই ছিলো না।রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্যারি কমিউনের( ফ্রান্স ১৮৭১) অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।অন্যদিকে জনগনের মাঝেও রয়েছে হাজার বছরের পুরানো সংস্কার,চিন্তা,অভ্যেস- রীতিনীতি। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রেও ছিলো নানা জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। ফলে এই নতুন পরিস্থিতি, গৃহযুদ্ধ,শত্রুর আক্রমণ -এসবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিলো খুবই জটিল ও দূরহ কঠিন কাজ।যা এর আগে কোন রাষ্ট্রকেই করতে হয় নি।শুধু বুর্জোয়া সমাজই নয়,পূর্বতন সকল সমাজের চিন্তা ও সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক নিয়মাদি পাল্টানোর সংগ্রামের ভিতর দিয়েই সোভিয়েত তথা শ্রমিকশ্রেণিকে এগুতে হয়।এখানে দ্বন্দ্বটা শ্রেণির সাথে শ্রেণির;ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার নয়।সামাজিক স্বার্থের সাথে ব্যক্তি স্বার্থের।আর এই পরিস্থিতিতেই সোভিয়েত সিনেমা।
সোভিয়েত সিনেমাগুলোর প্রকৃতি,বিষয়বস্তু বুঝতে হলে সমাজের গতি-প্রকৃতি ও সামাজিক -রাজনৈতিক এবং বৈষয়িক বিষয়গুলোকে কিভাবে তা প্রতিফলিত করে তাও বোঝা প্রয়োজন ।
EmoticonEmoticon